মঙ্গলবার দুপুর ১২:৩৫, ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী ফাহমিদা প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি ফাহমিদা প্রজেক্ট: অব‌হে‌লিত নারী‌দের কর্মসংস্থানে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ

ভরা বর্ষায় তরুণ আ‌লেম‌দের এক‌টি নৌকা ভ্রমণ

আ‌রিফুর রহমান লালপুরী

নৌকায় চড়ে আমি এক নতুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আবিষ্কার করলাম। মনে হচ্ছিল শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। বর্ষায় যেন নদী ফুলেফেপে উঠেছে। যেদিকে তাকাই যেন পানি আর পানি।

গত চার-পাঁচ দিন ধরে সারাদেশে টানা বর্ষণ। কখনও মাঝারি ও ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।শহরের রাস্তাগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মাদরাসার চৌহদ্দিতে স্বেচ্ছায় বন্দীজীবন যাপন করে মানসিক অস্বস্তি চরমে উঠেছে।এ‌দি‌কে গত এক মাস ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাজলুম ওলামায়েকেরামের একটি নৌকা ভ্রমণের প্রস্তুতি চলছে। সফরের দিনক্ষণ ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু বৃষ্টি বন্ধের খবর নেই। মনে এক অজানা শঙ্কা দেখা দেয়। তবে কি বিগত কয়েক দিন তরুণ আলেম ফয়েজ ভাই, সৈয়দ কাসেম ভাই, ইয়াসীন আরাফাত ভাইসহ আয়োজকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সফরের সকল আয়োজন বন্ধ হতে যাচ্ছে?

বর্ষা মৌসুমে ভরা নদীতে নৌকা ভ্রমণ! তাও আবার ভাদুঘর জামিয়া সিরাজিয়া প্রবীণ উস্তাদ মাওলানা আঃ কাইয়ুম ফারুকী, জামিয়া উম্মুল কোরা এর পরিচালক মুফতি ওবায়দুল্লাহ মাদানী, বিশিষ্ট ইসলামী আলোচক গাজী মাওলানা ইয়াকুব উসমানী, জামিয়া রহমানিয়া বেড়তলা মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আমানুল হক, উম্মুল মাদারিস জামিয়া ইউনুসিয়ার সাবেক শিক্ষক মাওলানা আঃ হকসহ ২৫ জন বড় বড় আলেমদের সাথে। এ সফর নিয়ে আমি খুব এক্সাইটেট ছিলাম।

গত পরশু ১০ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার। সকালটা বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল। নীল আকাশে সাদা-কালো মেঘেরা ছোটাছুটি করছে। ইদানিং ফজরে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই না। আল-জামিয়াতুল আরাবিয়্যা এর অত্যন্ত দরদী ও আমলওয়ালা উস্তাদ, মাওলানা নজরুল ইসলাম ভাই পরম মমতায় প্রতিদিন ফজরে জাগিয়ে দিচ্ছেন। আজ আর আমাকে ঘুম থেকে জাগাতে হয়নি। মুয়াজ্জিনের আযানের আগেই ঘুম ভেঙেছে। ফজরের পর থেকে অপেক্ষা করছি, কখন আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফর শুরু হবে।

মাদ্রাসা থেকে ছুটি কাটানোর কাজটি গতরাতেই সেরে রেখেছি। পরিচালক মুফতি শরীফ আহমাদ সদা হাসোজ্বল চেহারার একজন নিপাট ভদ্রলোক। মাহান আল্লাহ তার চেহারার সৌন্দর্যের সাথে আখলাকি সৌন্দর্যের অপূর্ব মিলন ঘটিয়েছেন। তিনি আবেদনের সাথে সাথেই ছুটি মঞ্জুর করেছেন। সকাল ৯টায় আমরা পৌঁছে যাই কাউতলী নৌকাঘাটে। গন্তব্য আমাদের নাছিরনগর হরিপুর জমিদার বাড়ি।

আমি মেঘনা পাড়ের সন্তান। মেঘনা নদীতে অনেক নৌকা ভ্রমণ হলেও তিতাস নদীতে কখনো মনে রাখার মত নৌকা ভ্রমণ হয়নি। তিতাস মেঘনা নদীর একটি শাখা নদী। নদীটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানা দিয়ে প্রবেশ করে। একদিকে নাসির নগর, চাতলপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। অন্যদিকে নবীনগর হয়ে আশুগঞ্জ আমার গ্রাম লালপুরে এসে নদীটি মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

সিন্ধান্ত অনুযায়ী কাউতলি নৌকা ঘাঁট থেকে আমাদের নৌকা ভ্রমণ শুরু হবে। সব প্রস্তুতি, চড়াই উৎড়াই শেষে সকাল সাড়ে ১০টার পর আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো। নদীর বুক চিরে চলতে শুরু করল আমাদের নৌকাটি। আমি শৈশব কৈশর পেরিয়ে যৌবন পার করছি এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। এই শহরের প্রতিটি অলিগলি আমার পরিচিত। কিন্তু নৌকায় চড়ে আমি এক নতুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আবিষ্কার করলাম। মনে হচ্ছিল শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। বর্ষায় যেন নদী ফুলেফেপে উঠেছে। যেদিকে তাকাই যেন পানি আর পানি। বেশকিছু এলাকা জুয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় তিতাস যেন মহা সমুদ্রের সাথে পাল্লা দিচ্ছে।

মাইকে স্লোমশনে (ক্ষীণ আওয়াজে) চলছিল জুনায়েদ জামশেদ রহঃ এর বিখ্যাত নাশিদ, `এক রোজো মমিনো তুমহে মারনা জরুর হে`, আর বাইরে তাকিয়ে দেখতে থাকলাম তিতাস নদীর রূপ-লাবণ‌্য, জেলেদের জাল পেতে মাছ ধরা, বিকট আওয়াজে মালবাহী ট্রলারগুলোর হারিয়ে যাওয়া।

পারস্পরিক গল্পগুজব আর সুরেলা বন্ধুদের থেকে নাশীদ শুনতে শুনতে কখন যেন গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম টেরই পেলাম না। নৌকা থেকে নেমে বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা জুবায়ের আহমদ আনসারী (রাহঃ) প্রতিষ্ঠিত নাসিরনগর থানার অন্তর্গত হরিণবেড় শংকরদাহ গ্রামে অবস্থিত আবু বাকার সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু জামে মসজিদে আমরা জোহর নামাজ আদায় করি। মসজিদটি অত্যন্ত সুন্দর ও পরিপাটি। আধুনিক স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। জোহর নামাজ আদায় করে আমরা হরিপুর রাজবাড়ীতে প্রবেশ করলামভ সেখানে প্রাচীন জমিদারদের বাড়ি পরিদর্শন করলাম। অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ।

লেখক মাওলানা আ‌রিফুর রহমান লালপুরী

বিকেলের তখন শেষ ভাগ। সিদ্ধান্ত হলো যেহেতু আমাদের আবার ফিরতে হবে আর মেঘলা পরিবেশ, দ্রুত সব গোছগাছ করে আমরা নৌকায় উঠলাম। নৌকার ইঞ্জিনের শব্দ বেজে উঠলো। শুরু হলো আমাদের ফিরতি যাত্রা। এরই মাঝে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া সেরে নিয়েছিলাম। এভাবেই চলতে চলতে আর গল্পে গল্পে আমরা একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছালাম। বিদায় জানালাম সাথীদেরকে আর স্মৃতিবিজড়িত দিনটিকে। দিনটি আমার জীবনের অন্যতম এক স্মরণীয় দিন, যা আমি হয়‌তো কোনোদিনই ভুলতে পারবো না।

ধন্যবাদ জানাই, মাজলুম ওলামায়ে কেরামদেরকে, যারা এই সুন্দর ভ্রমনের আয়োজন করেছেন এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই ভ্রমণটিকে স্বার্থক করেছেন। ভ্রমনটি আমার কাছে সত্যিকার অর্থেই স্মৃতিবিজড়িত, এই ভ্রমণে আমার উলামায়ে কেরামগণের সান্নিধ্যে থাকার,তাদের সোহবতে ধন্য হবার এবং নদী পথে নছিরনগর,হরিপুর জমিদারবাড়ি এবং যোবায়ের আহমদ আনসারী রহ কতৃক প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।

লেখক: মাওলানা আ‌রিফুর রহমান লালপুরী

শিক্ষক: জা‌মিয়া আরা‌বিয়‌্যা ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া

ক্যাটাগরি: প্রধান কলাম,  বিশেষ প্রতিবেদন,  শীর্ষ তিন

ট্যাগ:

Leave a Reply