বৃহস্পতিবার সকাল ১০:০৩, ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ. ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
হাফেজ আবুল হাসান কুমিল্লার হুজুরের জানাযায় জনতার ঢল ‘আমার স্ত্রী মাকসুদাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে থানায় নিয়ে যান’ বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

শর‌তের কাশফুল

৩০৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

শরৎ মা‌নেই কাশবন। শরৎ মা‌নেই নীল আকা‌শে সাদা মে‌ঘের বেলা, যেন ধবধ‌বে সাদা রমনীর চু‌লের খোঁপায় অরুন্ধতীর ছোঁয়া। শরৎ এলেই মন হা‌রি‌য়ে যে‌তে চায় কাশবনে। বাংলার সবুজ-শ‌্যামল প্রকৃ‌তি‌তে শর‌তের আগমন আমা‌দের ম‌ুগ্ধ ক‌রে। এজন‌্যই  শরৎ ‘ঋতুর রানী’।

পৃ‌থিবীর চার‌টি প্রধান ঋতুর এক‌টি হ‌চ্ছে শরৎকাল। পৃ‌থিবীর উত্তর গোলা‌র্ধে সে‌প্টেম্বর মা‌সে এবং দ‌ক্ষিণ গোলা‌র্ধে মা‌র্চে  শরৎকা‌লের আগমন ঘ‌টে। বাংলা‌দে‌শে আগ‌স্টের মধ‌্যভাগ থে‌কে অ‌ক্টোবর মা‌সের মধ‌্যভাগ পর্যন্ত শরৎকাল‌ বিস্তৃত থা‌কে।
এ সময় রাত তাড়াতাড়ি হয়। আবহাওয়া ঠান্ডা হ‌তে থা‌কে। শরৎকা‌লে  হিমঝু‌রি, গগন‌শিরীষ, ছা‌তিম, পাখিফুল, পান্থপাদ, বকফুল, মিন‌জিরি, শেফালী, শিউলি, কাশফুল ইত‌্যা‌দি ফুল ফুট‌তে দেখা যায়।  কদম ফু‌লের বর্ষা শেষ না হ‌তেই শুরু হয় ক‌াশফু‌লের মেলা। বর্ষার প‌রেই আসে শর‌তের কাশব‌নের সৌন্দর্য।  বর্ষার পর পরই যেন লু‌কি‌য়ে আসে শরৎ।  মানুষ কতই না মুগ্ধ হয় নীলাকা‌শের মাঝে কখ‌নো কা‌লো মে‌ঘে, কখ‌নো সাদা মে‌ঘের আবর‌ণে লু‌কিয়ে  হাসা সোনালী সূর্য আর তার স‌ঙ্গে বাতা‌সে শুভ্র সাদা কাশফু‌লের দোলা‌নো দেখে। বাতাস এলে ফুলগু‌লো একস‌ঙ্গে দে‌াল খায়। সে দৃশ‌্য স‌ত্যিই  ম‌নোহরণকারী ও ম‌নোরম!
মূলত, ভাদ্র-আশ্বিন মাস হ‌লো শর‌তের রাজত্বকাল। এ সময় গ্রামব‌াংলার ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট, উঁচুভূ‌মি, ডোবারপার, খা‌লেরপার,  টিলা, নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানা‌চে কা‌শের ঝাড় বেড়ে ও‌ঠে। নদীর তী‌রে প‌লিমা‌টির আস্তর থা‌কে। এ মা‌টি‌তে কা‌শের মূল সহ‌জে সম্প্রসা‌রিত হ‌তে পা‌রে। তাই নদীর তী‌রে  বা খা‌লের পা‌রে কাশফুল বে‌শি দেখা যায়। কোথ‌াও কোথ‌াও কাশফুল ফু‌টে বাগান সৃ‌ষ্টি ক‌রে। শর‌তের কাশফুল প্রকৃ‌তি‌কে সা‌জি‌য়ে তু‌লে অনন‌্য রূ‌পে। প্রস্ফু‌টিত সাদা কাশফু‌লের রূপ-লাবণ‌্য ও নয়না‌ভিরাম  সৌন্দর্য পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ‌দের সব সময় হাতছা‌নি দি‌য়ে ‌ডা‌কে।
কাশফু‌লের প্রাকৃ‌তিক সৌন্দর্য উপ‌ভোগ করার জন‌্য শরৎকালই হ‌চ্ছে উপযুক্ত সময়। এই সময়ে সাদা তু‌লোর ম‌তো নরম কাশফু‌লের ঢেউ বাতা‌সে দুল‌তে থা‌কে আর নীল আকা‌শের নি‌চে  ধবধ‌বে সাদা কাশফু‌লের সমুদ্র এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি এনে দেয়।
কাশফুল এক ধর‌নের ঘাসজা‌তীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞা‌নিক নাম ‘Saccharum Spontaneum. এরা উচ্চাত‌ায় ৫ থে‌কে ১০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এর আদি‌নিবাস রোমা‌নিয়ায়। এই কাশফু‌লের বেশ কিছু ঔষ‌ধি গুণ র‌য়ে‌ছে। যেমন-ম‌ানু‌ষের পিত্তথ‌লি‌তে পাথর হ‌লে নিয়‌মিত গা‌ছের মূলসহ অন‌্যান‌্য উপাদান দি‌য়ে ঔষধ তৈ‌রি ক‌রে পান কর‌লে পাথর দূর হয়। কাশফুল মি‌হি ক‌রে বে‌টে চন্দনের ম‌তো নিয়‌মিত গা‌য়ে মাখ‌লে গা‌য়ের দুগর্ন্ধ দূর হয়।
এছাড়াও কাশফু‌লের গাছ  দি‌য়ে ঘ‌রের বেড়া  ও চালা ছাওয়া যায়। গ্রাম-বাংলার মানুষ কাশ ঘাস দি‌য়ে মাদুরসহ বি‌ভিন্ন ব‌্যবহার্য জি‌নিসপত্র তৈ‌রি ক‌রেন। কাশফুল ঝ‌রে যা‌ওয়ার পর কাশফু‌লের ডগা দি‌য়ে ঝাড়ু তৈ‌রি করা হয়। এছাড়া শুক‌নো কাশফু‌লের গাছ গ্রা‌মের বধূরা জ্বালা‌নি হি‌সে‌বেও ব‌্যবহার করেন।
দিগন্ত‌জোড়া কাশফু‌লের শুভ্রতা শরৎকে ক‌রে তো‌লে অনন‌্য। কিন্তু প‌রিতা‌পের বিষয়, কা‌লের বিবর্ত‌নে আজ সেই কাশফুল ধী‌রে ধী‌রে হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে! নগরায়ন, কৃ‌ষিজ‌মির সম্প্রসারণ এবং প্রকৃতির প্রতি মানু‌ষের অবহেলার কার‌ণে বাংলার ঐতিহ‌্যবাহী এই কাশফুল এখন শুধুই স্মৃ‌তি। ত‌বে আশার কথা হ‌লো, এই প্রতিকূল প‌রি‌বে‌শের মা‌ঝেও ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া শহ‌রের দাড়িয়াপুর, নয়নপুর, ভাদুঘর, পু‌নিয়াউট ও সুলতানপুর এলাকায় এখ‌নো শরৎকা‌লে দিগন্ত বিস্তৃত কাশবন দেখা যায়। প্রতি‌দিন সূ‌র্যোদ‌য়ের পর থে‌কে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানু‌ষের বিচরণ থা‌কে এসব কাশব‌নে।
বস্তুত, শর‌তের হালকা মৃদু বাতা‌সে কাশফু‌লের ঢেউ খেলা‌নো ম‌নোরম দৃশ‌্য যে‌কো‌নো বয়‌সের মানুষের হৃদয় হরণ ক‌রে। শুভ্র  কাশফু‌লের হা‌সি দে‌খে ঘাস ফড়িংরাও আন‌ন্দে আত্মহারা হ‌য়ে টিং টিং ক‌রে কাশফু‌লের ডগায় লাফি‌য়ে প‌ড়ে। সন্ধ‌্যা নাম‌লে কাশফুল তা‌দের হা‌সি থা‌মি‌য়ে ঝি‌মি‌য়ে চুপ‌টি ক‌রে থা‌কে। রাত শে‌ষে সকা‌লে সূ‌র্যের আলোর ছটা পে‌লে আবার হে‌সে ও‌ঠে তার অপার সৌন্দর্য ছ‌ড়ি‌য়ে দেয় প্রকৃ‌তির মধ্যে।
কাশফুল‌কে চে‌নে না বা কাশফু‌লের সৌন্দ‌র্যে মুগ্ধ হয়‌নি আমা‌দের দে‌শে এমন মানুষ খুঁ‌জে পাওয়া বিরল। ভাদ্র-আশ্বিন মাস শরৎকাল হ‌লেও ক‌াশফু‌লের সৌন্দর্য কা‌র্তিক মাস পর্যন্ত থা‌কে। যুগ যুগ ধ‌রে বিখ‌্যাত ক‌বিরা লি‌খে‌ছেন শত শত ক‌বিতা, সাহি‌ত্যিকরা তা‌দের সা‌হি‌ত্যের ভাষায় সুন্দরভা‌বে ফু‌টি‌য়ে তু‌লে‌ছেন শরৎকালের প্রতীক কাশফু‌লের নয়না‌ভিরাম সৌন্দর্য‌কে নিয়ে। শিল্পীরা রঙ আর তু‌লির আঁচ‌ড়ে সু‌নিপুণভা‌বে ফুটি‌য়ে তু‌লেছেন কাশফু‌লের নজরকাড়া জীবন্ত ছ‌বি।  শর‌তের কাশফুল ও শরৎকা‌লের সৌন্দ‌র্যে মুগ্ধ হ‌য়ে নিস‌র্গের ক‌বি জীবনান্দ দাশ তার বিখ‌্যাত ‘বাংলার মুখ’ ক‌বিতায় লি‌খে‌ছেন, ‘বাংলার মুখ আমি দে‌খিয়াছি, তাই পৃ‌থিবীর রূপ খুঁ‌জি‌তে যাই না আর’।
বাস্ত‌বেই কাশফুল মা‌নেই শর‌তের দিন আর শর‌তের দিন মা‌নেই কাশফুল। কাশফুল ছাড়া শরৎ ঋতু‌কে কল্পনাই করা যায় না!  তাইতো কাশফুল‌কে অ‌নে‌কেই ঋতুরানী শর‌তের প্রতীক হি‌সে‌বে বি‌বেচনা ক‌রে থা‌কেন।
খায়রুল আকরাম খান

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

পিআর পদ্ধ‌তির সু‌বিধা-অসু‌বিধা

শর‌তের কাশফুল

সমস্যার ঘুরপা‌কে গোটা জা‌তি (৩য়…

সমস্যার ঘুরপা‌কে গোটা জা‌তি

৪০ বছর পর শৈশ‌বের বন্ধু‌দের…