সোমবার সকাল ৯:১৪, ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ. ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
হাফেজ আবুল হাসান কুমিল্লার হুজুরের জানাযায় জনতার ঢল ‘আমার স্ত্রী মাকসুদাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে থানায় নিয়ে যান’ বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ভার‌তের আধিপত্যবাদ ও বাংলা‌দেশ-৬ষ্ঠ পর্ব

২৪৮ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

১৯৭২ সা‌লের ১২ অ‌ক্টোবর গণপ‌রিষ‌দের দ্বিতীয় অ‌ধি‌বেশ‌নে স্বাধীন বাংলা‌দে‌শের নতুন সং‌বিধা‌নের খসড়া উপস্থাপন করা হয় এবং ৪ ন‌ভেম্বর তা গৃহীত ও বি‌ধিবদ্ধ হয়। এরপর ১৯৭২ সা‌লের ১৬ ডি‌সেম্বর  নতুন সং‌বিধান কার্যকর করা হয়।

আর এই সং‌বিধান কার্যকর হওয়ার সা‌থে সা‌থে  গণপ‌রিষ‌দের কার্যক্রম  সমাপ্ত হয় এবং গণপ‌রিষদ বা‌তিল হ‌য়ে যায়।
 উল্লেখ‌্য, ১৯৭০ সা‌লের নির্বা‌চিত জনপ্রতি‌নি‌ধি‌দের নি‌য়ে গ‌ঠিত গণপ‌রিষ‌দের সদস‌্যরা ড. কামাল হো‌সে‌নের নেতৃ‌ত্বে খসড়া সং‌বিধান তৈ‌রি ক‌রে‌ছি‌লেন। সং‌বিধান প্রণয়ন ক‌মি‌টির সদস‌্য সংখ‌্যা ছিল প্রায় ৩৪ জন। মু‌জিববা‌দের চার নী‌তি-গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম‌নি‌র‌পেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ সং‌বিধা‌নে রাষ্ট্র প‌রিচালনার মূলনী‌তি হি‌সে‌বে গ্রহণ করা হয়। ১১ টি ভা‌গে বিভক্ত এই সং‌বিধা‌নে ১৫৩ টি অনু‌চ্ছে র‌য়ে‌ছে। খসড়া সং‌বিধান প্রণয়ন ক‌মি‌টি মোট ৭৪ টি বৈঠকে মি‌লিত হয় এবং ৩০০ ঘণ্টা ব‌্যয় ক‌রে এর রি‌পোর্ট প্রণয়ন ক‌রে। এই ক‌মি‌টি‌তে বি‌রোধী দ‌লের কো‌নো সদস‌্যকে র‌াখা হয়‌নি।

এখা‌নে অ‌তিসং‌ক্ষে‌পে রাষ্ট্র প‌রিচালনার মূলনীতি সম্প‌র্কে  আলোচনা করা হ‌লো-(১) গণতন্ত্র : জনগ‌ণের শাসন, যেখা‌নে জনগণ তা‌দের প্রতি‌নি‌ধি নির্বাচ‌নের মাধ‌্যমে সরকার প‌রিচা‌লনায় অংশ নেয়। (২) সমাজতন্ত্র : এক‌টি শোষনমুক্ত ও ন‌্যায়ানুগ সমাজ প্রতিষ্ঠার আদর্শ, যা অর্থ‌নৈ‌তিক বৈষম‌্য হ্রাস কর‌তে চায়। (৩) ধর্ম‌নির‌পেক্ষতা : সকল ধ‌র্মের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নি‌শ্চিত করা, যেখা‌নে রাষ্ট্র কো‌নো বি‌শেষ ধ‌র্মের পৃষ্ঠ‌পোষকতা কর‌বে না। (৪) জাতীয়তাবাদ : বাঙা‌লি জাতীয়তাবাদ, যা বাংলা‌দে‌শের জনগ‌ণের ঐক‌্য ও সংহ‌তির প্রতীক।

 ব‌াংলা‌দে‌শের নতুন এই সং‌বিধান প্রণয়‌নের পর পরই রাষ্ট্র প‌রিচালনার চার মূলনী‌তির বিরু‌দ্ধে সর্বমহ‌লে তীব্র প্রতি‌ক্রিয়ার সৃ‌ষ্টি হয়,  কিন্তু তৎকালীন শেখ মু‌জিব সরকার তা‌তে তেমন কো‌নো  কর্ণপাত ক‌রে‌ননি।
 বস্তুত, ১৯৭০ সা‌লের সাধারণ নির্বাচন অনু‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছিল ৬ দফার ভি‌ত্তি‌তে। সেই ৬ দফার ম‌ধ্যেও আওয়ামী লীগ গৃহীত চার রাষ্ট্রীয় মূলনী‌তির এক‌টিও উল্লেখ ছিল না। তাছাড়া নির্বচনী ইশ‌তিহা‌রে আওয়ামী লীগ আরো উল্লেখ ক‌রে‌ছিল যে, তারা ইসলাম ধর্ম বি‌রোধী কো‌নো আইন-কানুনও পাস করবে না। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগই ভারত থে‌কে প্রবাসী বাংলা‌দেশ সরকার গু‌টি‌য়ে নি‌য়ে এসে ক্ষমত‌ার মসন‌দে বসার সা‌থে সা‌থেই ভারত সরকা‌রের পরাম‌র্শে সেই  অঙ্গীকার ভঙ্গ কর‌লো!!
প্রকৃত প‌ক্ষে ‘৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ছিল পা‌কিস্তান কাঠা‌মোর আওতায় অনু‌ষ্ঠিত নির্বাচন। আওয়ামী লীগের নির্বা‌চিত সংসদ সদস‌্যরা জনগ‌ণের ম‌্যা‌ন্ডেট লাভ ক‌রে‌ছিল পা‌কিস্তা‌নের অধীন ; নতুন রাষ্ট্র বাংলা‌দে‌শের অধী‌নে নয়। স‌ুতরাং ‘৭২-এর আওয়ামী লীগ কর্তৃক সং‌বিধান প্রদান নী‌তিগত দিক দি‌য়ে মোটেই বৈধ ছিল না। স্বাধীন বাংলা‌দে‌শের সং‌বিধান রচনার পূ‌র্বেই জনগ‌ণের তরফ থে‌কে তা‌দের নতুন ম‌্যা‌ন্ডেট লাভ করা ছিল অত‌্যাবশ‌্যকীয়, কিন্তু তারা তা ক‌রে‌নি!! এখা‌নে তারা চরম সংকীর্ণতার প‌রিচয় দেয় ও মু‌ক্তিযু‌দ্ধের জাতীয় রূপ‌কে দলীয় রূপ প্রদা‌নের জন‌্য বি‌ভিন্নমুখী ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নি‌তে থা‌কে।
 যার ফ‌লে মুক্তিযু‌দ্ধে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ ব‌হির্ভূত  সক‌ল শ‌ক্তি হ‌তোদ‌্যম হ‌েয়ে প‌ড়ে এবং তারা তা‌দের নবতর আশা-আকাংখার বাস্তবায়ন করার সু‌যোগ থে‌কে প্রায় সস্পূর্ণভা‌বেই ব‌ঞ্চিত হয়। যু‌দ্ধোত্তর বিধ্বস্ত বাংলা‌দে‌শে যখন জাতীয় ঐক্যের সর্বা‌ধিক প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সম‌য়েই আওয়ামী লীগ একলা চ‌লোর নীতি অনুসরণ করার মধ‌্য দি‌য়ে জনমত এবং জনগ‌ণের আশা-আকাংখা  পদদ‌লিত ক‌রে চল‌তে থা‌কে। আওয়ামী লী‌গ শাসনকা‌লের বিশ্বাসঘাতকতার আনুষ্ঠা‌নিক স্বাক্ষর এখান থে‌কেই শুরু।
আওয়ামী লী‌গের এই আচরণ ছিল অনুগত তল্লীবাহকের প্রভূর আদেশ-‌নি‌র্দেশ পা‌লন করার বাধ‌্যাবধকতা। কারণ, এ কথা সর্বজন‌বি‌দিত যে, সদ‌্য স্বাধীন বাংলা‌দে‌শে‌র ‘৭২-এর সং‌বিধান প্রণেতা হ‌চ্ছে স্বয়ং দিল্লীর শাসকচক্র। ‘৭২-এর সং‌বিধা‌নের উৎস তাই বাংলা‌দে‌শের জনগণ নয়, সম্প্রসারণবাদী এবং সাস্প্রদা‌য়িক ভারতীয় শাসক চক্রই হ‌চ্ছে মূল উৎস।
এভা‌বেই যু‌দ্ধোত্তর বিধ্বস্ত বাংলা‌দে‌শের কো‌টি কো‌টি বুভূক্ষ মানু‌ষের জন‌্য অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থা‌নের ব‌্যবস্থা করার পূ‌র্বেই সং‌বিধা‌নের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এসে মাথায় চে‌পে ব‌সে। এই চার মূলনী‌তি আরোপ করার মধ‌্য দি‌য়ে দিল্লীর কর্তারা তা‌দের মূল লক্ষ‌্যই স্থির ক‌রে রা‌খে।
 বাস্ত‌বে এই চার মূলনীতির ছিল বাংলা‌দেশ‌কে দিল্লীর অনুগত রা‌ষ্ট্রে প‌রিণত ক‌রে রাখার  অন‌্যতম প্রয়াস। বিস্ময়কর বিষয় হ‌লো, ভারতীয় সং‌বিধানও এই চার মূলনী‌তির ব‌্যতিক্রম নয়। এই সং‌বিধান‌কে ভার‌তীয় সং‌বিধা‌নের ফ‌টোক‌পিও বলা যে‌তে পা‌রে। সুতরাং বাংলা‌দে‌শের সং‌বিধা‌নে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম‌নির‌পেক্ষতা  ও জাতীয়তাবাদ স‌ন্নি‌বে‌শিত করার মধ‌্য দি‌য়ে বাংলা‌দেশ‌কে মূলত ভার‌তেরই এক‌টি অঙ্গরাজ‌্য হি‌সে‌বে সুক্ষ্ণভা‌বে চিহিৃত করা হ‌য়ে‌ছে, কো‌নো প্রতি‌বেশী বা বন্ধু র‌াষ্ট্র হি‌সে‌বে নয়!! (চল‌বে)।
খায়রুল আকরাম খান
ব‌্যু‌রো চীফ : deshdorshon.com

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply