মঙ্গলবার সকাল ১১:২৫, ১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ. ১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
‘আমার স্ত্রী মাকসুদাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে থানায় নিয়ে যান’ বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ভার‌তের আধিপত্যবাদ ও বাংলা‌দেশ-৩য় পর্ব

৭৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

১৯৭২ সা‌লের ১৫ মা‌র্চের ম‌ধ্যে ব‌াংলা‌দেশ থে‌কে ভারতীয় সেনাবা‌হিনী চ‌লে যাওয়ার পর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ মু‌জিবুর রহসা‌নের আমন্ত্রণক্রমে তিন দি‌নের রাষ্ট্রীয় সফ‌রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গ‌ান্ধী ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন। লক্ষ লক্ষ জনতা তা‌কে আন্ত‌রিক অভ‌্যর্থনা জানায়। ১৯ মার্চ উভয় প্রধানমন্ত্রী যুক্ত  ইশতেহার প্রকাশ ক‌রেন ও ২৫ বছর মেয়াদী “বন্ধুত্ব, সহ‌যো‌গিতা ও শান্তি চু‌ক্তি” না‌মে এক‌টি চু‌ক্তি‌তে  স্বাক্ষর ক‌রেন।  এই চুক্তি‌টি ছিল ১২ টি অন‌ু‌চ্ছেদসম্ব‌লিত। তৎকালীন শেখ মু‌জিব সরকার দে‌শ ও জনগ‌ণের স্বার্থক্ষুন্ন ক‌রে এই গোলামী চু‌ক্তি সম্পন্ন ক‌রে‌ছি‌লেন।

এই চু‌ক্তি‌টি গণমাধ‌্যমে প্রকা‌শের  পর ওই সময়   দেশ‌প্রেমিক সকল রাজ‌নৈ‌তিক দল এর তীব্র বি‌রোধীতা ক‌রে‌ছি‌লো। চু‌ক্তিগু‌লো হ‌লো-(১) উভয় দেশ নিজ নিজ স্বাধীনতা, সার্ব‌ভৌমত্ব  ও  ভৌগ‌লিক অখন্ডতা বজায় রে‌খে একে অপ‌রের অভ‌্যন্তরীন বিষ‌য়ে হস্ত‌ক্ষেপ করা থে‌কে বিরত থাক‌বে। (২) উভয়পক্ষ উপ‌নি‌বেশবাদ ও বর্ণবাদ বি‌রোধী। উভয় দেশ উপ‌নি‌বেশবাদ ও বর্ণ বৈষম‌্যবি‌রোধী সংগ্রা‌মে জনগ‌ণের ন‌্যায়সঙ্গত আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন দান কর‌বে।  (৩) উভয়পক্ষ তা‌দের জোট‌নিরপেক্ষ ও শা‌ন্তিপূর্ণ সহঅবস্থা‌নের নী‌তি‌তে অটল থাক‌বে।(৪) যে কোনো আন্তজা‌র্তিক সমস‌্যায় উভয়পক্ষের স্বা‌র্থে তারা নিয়‌মিত যোগা‌যোগ ক‌রে সে ব‌্যাপা‌রে মত‌বি‌নিময় কর‌বে। (৫) উভয় দে‌শের ক্ষমতা  ও পারস্প‌রিক সুবিধা নীতি‌ভি‌ত্তিক বাণিজ‌্য, প‌রিবহণ ও যোগা‌যোগের ক্ষে‌ত্রে সহ‌যো‌গিতা  প্রসা‌রিত কর‌বে।(৬) বন‌্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী সমতল উন্নয়ন এবং জল বিদ‌্যুৎ , বিদ‌্যুৎ  ও সেচব‌্যবস্থার উন্নয়‌নে যৌথ সমীক্ষা চালাবার ব‌্যাপারে উভয়পক্ষ সম্মত হন।(৭) চু‌ক্তিকারী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন উভয়পক্ষ শিল্প, সা‌হিত‌্য, সংস্কৃ‌তি, খেলাধুলার ক্ষে‌ত্রে সম্পর্ক প্রসার কর‌বে। (৮) উভয় একে অপ‌রের বিরু‌দ্ধে প‌রিচা‌লিত কো‌নো সাম‌রিক চু‌ক্তি‌তে আবদ্ধ হ‌বে না। (৯) কো‌নো এক প‌ক্ষের বিরু‌দ্ধে তৃতীয় পক্ষ সশস্ত্র সংষ‌র্ষে  লিপ্ত হ‌লে চু‌ক্তিক‌ারী প্রত্যেকে তৃতীয় পক্ষ‌কে যে কো‌নো প্রকার সাহায‌্যদা‌নে বিরত থাক‌বে। (১০) এই চু‌ক্তির প‌ক্ষে অসামঞ্জস‌্য হ‌তে পা‌রে, এমন গোপন বা প্রকাশ‌্য  এক বা একা‌ধিক রা‌ষ্ট্রের সঙ্গে  উভ‌য়ের‌ কেউই কো‌নো অঙ্গীকার কর‌বে না। (১১) এই চু‌ক্তির মেয়াদ ২৫ বছর জন‌্য স্বাক্ষ‌রিত হ‌লো। চু‌ক্তিকারী উভয়প‌ক্ষের পারস্প‌রিক সম্ম‌তিতে চু‌ক্তির  মেয়াদ বাড়া‌নো যে‌তে পা‌রে। (১২) এই চ‌ু‌ক্তির কো‌নো অনু‌চ্ছে‌দের ব‌াস্তব অর্থ   করবার সময়  কো‌নো সমস‌্যা দেখা দি‌লে তা পারস্প‌রিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার মাধ‌্যমে তা নিস্প‌ত্তি কর‌তে হ‌বে।

১৯৭২ সা‌লের ভারত-বাংলা‌দের ম‌ধ্যেকার এই চু‌ক্তি‌টি মূলত এক‌টি  মৈত্রী ও সহ‌যো‌গিতার চু‌ক্তি হ‌লেও, বাস্ত‌বে এটি ছিল এক‌টি দাস‌ত্বের চু‌ক্তি। এই চু‌ক্তি‌টি যখন সম্পন্ন হয়, তখন ১৯৭১ সা‌লের যুদ্ধের কার‌ণে দে‌শের রাস্তাঘাট, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সেতুকালর্ভাট, বাড়িঘর ইত‌্যাদি ধব্বংস হ‌য়ে গি‌য়ে‌ছিল। যুদ্ধ-‌বিধ্বস্ত বাংলা‌দেশ পুনর্গঠ‌নের জন‌্য বি‌দেশী সাহায‌্য-সহ‌যো‌গিতা ও স্বীকৃ‌তির অত‌্যান্ত প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ২৫ বছ‌রের এই দাসত্ব চু‌ক্তির কার‌ণে ‌তখ‌নও পর্যন্ত চীন, সৌ‌দি আরব, পা‌কিস্তান, সুদান, মিশর, আফগা‌নিস্তান, লেবানন, মর‌ক্কো, আল‌জে‌রিয়া, তিউনে‌শিয়া, মৌরীতা‌নিয়া, সি‌রিয়া, নাইজ‌ার, ক‌্যা‌মেরুন, জর্ডান, কু‌য়েত, ইরান, তুরস্ক, কাতার, গি‌নি, নাইজে‌রিয়া, বে‌নিন, দ‌ক্ষিণ ভি‌য়েতনামসহ আরো অ‌নেক দেশ‌ কিছু‌তেই বাংলা‌দেশ‌কে স্বীকৃ‌তি দি‌চ্ছিল না। এই গোলামীর চুক্তি তখন বাংলা‌দে‌শের জন‌্য গলার কাটা হ‌য়ে দাঁড়ায়।
এই চুক্তির মাধ‌্যমে সীমা‌ন্ত এলাকার তিন মাইল পর্যন্ত অবাধ বা‌ণি‌জ্যিক লেন‌দের সু‌যোগ সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছিল। এই চু‌ক্তির মাধ‌্যমে শুল্ক ব‌্যবস্থা ও বাণি‌জ্যিক বাধা কমা‌নোর জন‌্য কিছু নিয়মকানুন তৈ‌রি করা হ‌য়ে‌ছিল। এসময় বাংলা‌দেশ ও ভার‌তের ম‌ধ্যে আসা-যাওয়ার জন‌্য তেমন কো‌নো ভিসার প্রয়োজন হ‌তো না। ফ‌লে ভারত-বাংলা‌দেশ সীমান্ত একাকার হ‌য়ে যায়। বিনা অনুম‌তি‌তে বা বিনা দ‌লি‌লেই বাংলা‌দে‌শের অভ‌্যন্ত‌রে ভারতীয় জনতার প‌ন্যের স্রোত প্রবা‌হিত হ‌তে থা‌কে। বাংলাদেশ তখন বাস্ত‌বেই ভার‌তের বাজা‌রে প‌রিণত হয়।
এই চু‌ক্তির পর পরই বাংলা‌দেশ সরকার ভার‌তে পাট ও পাটজাত দ্রব‌্য রফতানী উপর নি‌ষেধাজ্ঞা তু‌লে ন‌য়ে। এর ফ‌লে খোলা বর্ডার দি‌য়ে চোরাচালা‌নের মাধ‌্যমে উৎপ‌াদিত পাট  ও পাটজাত দ্রব্যের এক‌টি বৃহৎ অংশ ভার‌তে চ‌লে  যাওয়ার পথ আরো সুগম হয়। উল্লেখ‌্য, ১৯৭২ সা‌লের আগে ভারত কখ‌নো পাট ও পাটজাত দ্রব‌্য বি‌দে‌শে রফতানী কর‌তে পার‌তো না, এমন কি পা‌টের অপর্যাপ্ত উৎপাদ‌নের ফ‌লে অ‌নেক জুট মিল বন্ধ ক‌রে দি‌তে বাধ‌্য হ‌তে হ‌য়ে‌ছিল, সেখা‌নে বাংলা‌দেশ অভ‌্যুদ‌য়ের পর পূ‌র্বের অবস্থা সম্পূর্ণরূ‌পে বদ‌লে যায়। ১৯৭২ সা‌লের ২৫ বছ‌রের বন্ধুত্ব ও সহ‌যো‌গিতা চুক্তি পর থে‌কে বাংলা‌দেশ হ‌তে লক্ষ লক্ষ গাইট পাট অবা‌ধে ভার‌তে পাচার হতে থা‌কে।  ভারতীয় পাটকলগু‌লোর ম‌ধ্যে দ‌ুই-‌তিন শিফ‌টে কাজ চালু  হয়! পাশিপা‌শি বাংলা‌দেশী কাঁচাপাট রফতানী দ্বারা ভারত নিয়‌মিতভা‌বে বিপুল বৈ‌দেশীক মুদ্রা উপার্জন অব‌্যাহত রা‌খে। অবাক হওয়ার বিষয়, এ সম্প‌র্কে শেখ মুজিব টু শব্দ‌টি পর্যন্ত কর‌লো না! প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন আসে-এটা কি একজন দেশ‌প্রেমিক সরকা‌র প্রধা‌নের আচরণ হ‌তে পা‌রে?
উল্লেখ‌্য, ১৯৭৪ সা‌লের দি‌কে দু‌র্ভিক্ষ চলাকা‌লে ভারতীয় এদে‌শের দালালরা সারা দে‌শের বি‌ভিন্ন জায়গায় পা‌টের গুদা‌মে আগুন দেওয়া শুরু ক‌রে। গুদামে ভরা কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব‌্য এভা‌বে পুড়ে যাওয়ার কারণে সরকা‌রের প্রচুর অর্থ‌নৈ‌তিক ক্ষ‌তি হয়। এ যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’! তৎকালীন বাজা‌র মূ‌ল্যে এই ক্ষ‌তির প‌রিমান ছিল প্রায় ১৪০০ মি‌লিয়ন টাকা।
এইদি‌কে ভারতীয় সরকা‌রের চা‌পে সরকার বাংলা‌দেশী টাকার মান ক‌মি‌য়ে দি‌য়ে ভারতীয় রুপির সমপর্যা‌য়ে নি‌য়ে আসার সিদ্ধান্ত ঘোষণা ক‌রে। টাকার মান কমাবার পর পা‌টের দাম পুনঃ‌নির্ধারণ করার ফ‌লে সৎভা‌বে ব‌্যবসা করার চে‌য়ে চোরাচালান অ‌নেক লাভজনক হ‌য়ে দাড়ায়। ফ‌লে বাংলা‌দে‌শের জীবন সোনালী আশের রপ্তানী হ্রাস পায়।
২৫ বছ‌রের চু‌ক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলা‌দে‌শের  জন‌্য নতুন টাকা ছাপায়। এই সময় নকল নো‌টে সারা‌দেশ ছে‌য়ে যায়। নকল টাকার বিরূপ প্রতি‌ক্রিয়া বাংলা‌দে‌শের অর্থনী‌তির সর্ব‌ক্ষে‌ত্রে উল্লেখযোগ‌্য ক্ষ‌তিসাধন ক‌রে। ভারতীয় আমলা‌দের জাতীয় প্রশাস‌নে হস্তক্ষেপ, সীমান্ত দি‌য়ে অবাধ চোরাচালান, ভার‌তে পাট ও পাটদ্রব্যের রপ্তানীর উপর নি‌ষেধাজ্ঞা প্রত‌্যাহার, ভার‌তে বাংলা‌দেশী ম‌ুদ্রা ছাপা‌নো, বাংলা‌দে‌শের টাকার মূল‌্য কমা‌নো ইত‌্যা‌দি কার‌ণে জাতীয় বৈ‌দে‌শিক মুদ্রার আয় ক‌মে যায় এবং জাতীয় সঞ্চয়ও কমে যায়। আর এই অর্থ‌নৈ‌তিক ঘাট‌তি ১৯৭৪ সা‌লের দু‌র্ভিক্ষ‌কে বেশ ত্বরা‌ন্বিত ক‌রে।
ভারতের জন‌্য এত কিছু করার পরও শেখ মুজিব পা‌নি সমস‌্যা, সীমান্ত নির্ধারণ, সমুদ্রসীমা, অর্থ‌নৈতিক জলসীমা নিরূপন প্রভৃ‌তি মূল সমস‌্যাগু‌লোর‌ বিষ‌য়ে ভার‌তের কাছ থে‌কে কিছুই আদায় কর‌তে পা‌রেন‌নি!
বস্তুত, বাংলা‌দেশ-ভারত মৈত্রী চু‌ক্তি সো‌ভি‌য়েত-ভারত মৈত্রী চু‌ক্তির আলো‌কেই প্রণীত হ‌য়ে‌ছিল।    ক‌থিত আছে, শেখ মু‌জিব ১৯৭২ সা‌লের ১০ জানুয়া‌রি পাকিস্তা‌নের কারাগার থে‌কে মুক্ত হ‌য়ে স্বদে‌শে প্রত‌্যাবর্তন ক‌রে  জনগণ‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, বাংলা‌দেশ‌কে তি‌নি সুইজারল‌্যা‌ন্ডের ম‌তো শা‌ন্তির  দেশ বানা‌বেন, যেখা‌নে থাক‌বেন না কো‌নো  শোষন, অত‌্যাচার, বৈষম‌্য ও প্রতি‌বেশী দে‌শের আগ্রাসন। মূলত ভারত-বাংলা‌দেশ মৈত্রী চু‌ক্তির মাধ‌্যমে তি‌নি  সদ‌্য স্বাধীন বাংলা‌দেশ‌কে ভার‌তের এক‌টি করদ রা‌জ্যেই প‌রিণত ক‌রে‌ছি‌লেন। (চল‌বে)।
খায়রুল আকরাম খান
ব‌্যু‌রো চীফ : deshdorshon.com

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

ভার‌তের আধিপত্যবাদ ও বাংলা‌দেশ

আগে সংস্কার প‌রে নির্বাচন

বিএনপি কি জিয়াউর রহমানের পলিসী…