দুর্ঘটনা’ একটি অদৃষ্টপূর্ব, অকল্পনীয় এবং আকস্মিক ঘটনা বা বিষয় যা প্রায়শঃই অমনোযোগীতা কিংবা প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের ফলে সৃষ্ট হয়ে থাকে, সচরাচর ক্ষেত্রে এটি প্রায়শঃই ব্যক্তিকেন্দ্রীক, মানসিক কিংবা সামাজিক বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু আকস্মিকভাবে ঘটনা ঘটার পূর্বেই যদি দুর্ঘটনা চিহিৃত করা যায় বা সর্তক হওয়া যায়, তাহলে এ সমস্যা দূর করা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। অবাক হওয়ার বিষয়, আমাদের রাষ্ট্র এর বিপরীতে অবস্থান করছে। অথচ প্রতিটি প্রাণের নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
দুর্ঘটনা একটি রাষ্ট্রেীয় সমস্যা। এটি একটি জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয় ; এর ফলে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের মুত্যু হয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং দেশের অর্থনীতিতে অপূরনীয় ক্ষতি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি বছরে প্রায় ৩০ লক্ষেরও বেশি মানুষের দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু ঘটে!
দুর্ঘটনা সাধারণত কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন-কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, পরিবহন দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ড সংক্রান্ত দুর্ঘটনা, ভবন ধসের দুর্ঘটনা, সংঘর্ষ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ইত্যাদি। প্রসঙ্গক্রমে বলা যেতে পারে যে, আমাদের দেশে সব আকস্মিক বিপদকে গণহারে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দেখা যায় । তবে সব অপ্রত্যাশিত মৃত্যুকে আর যাই হোক মনে হয় দুর্ঘটনা না বলাই উত্তম।
আমাদের দেশে কোনো ভয়াবহ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রচুর লেখালেখি শুরু হয়, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা-সামালোচনা চলে এবং সরকারও সুষ্ঠু তদন্ত স্বাপেক্ষে দুর্ঘটনার কারণ চিহিৃত করে এর প্রতিকারের জন্য ওয়াদা করে। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত আর কখনো হয় না। তবে তদন্ত হলেও তা কখনো জনসম্মুখে প্রকাশ করে না। সরকার বাহাদুর বিভিন্ন আশ্বাসের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে কিছু নগদর টাকা ও ত্রাণ বিতরণ করে। আপাতত সরকারের কাজ এতটুকু পর্যন্ত হয়। এরপর কাজের কাজ কিছুই হয় না। ফলে একটি দুর্ঘটনা থেকে আরেকটি দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়, অথার্ৎ পুরানো অপ্রত্যাশিত অশুভ ঘটনা চক্রাকারে আরো ভয়াবহ আকারে ফিরে আসে। ফলস্বরূপ রাষ্ট্রে জীবনহানি, সম্পদহানি বা শারীরিক ও মানসিক আঘাতের সংখ্যা দিন দিনই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এককথায় বলা যেতে পারে, সমস্যা সমস্যার জায়গাতেই থেকে যাচ্ছে-সমাধান আর হচ্ছে না। সমস্যার ঘুরপাকে আজ গোটা জাতি। এধরনের প্রবণতা একটি রাষ্ট্র ও জাতির জন্য মোটেই শুভকর নয়।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। আনুমানিক দুপুর দেড়টার দিকে বিমানটি মাইলস্টোন কলেজের চত্বরের ভেতরে আছড়ে পড়ে। এতে বিমানের পাইল, দুইজন শিক্ষক ও ২৭ জন শিশু শিক্ষার্থীসহ মোট ৩০ জন প্রাণ হারায় ও আহত হন প্রায় ১৬৫ জনের মতো।
বলাবাহুল্য, এদেশে বারবার ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর একই প্রশ্ন প্রবলভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমান বাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে এমন প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে অগ্নিকান্ডের দাবদাহে পুড়ে যাওয়া ছোট ছোট নিস্পাপ ফুটফুটে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির মর্মস্পর্শী চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
২২ জুলাই, একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ তিন বাহিনীর প্রধান ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানরা শোকবার্তা জানিয়েছেন। এখন প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন আসে-এই প্রতীকী আনুষ্ঠানিকতা কি প্রকৃত সমাধান? জনগণের চোখে মনে হয় যেন দায়িত্ব এড়ানোর এক অতি সহজ কৌশল।
দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, আমাদের দেশে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ইতিহাস বেশ দীর্ঘ। সাস্প্রতিক সময়ে আমরা এসব দুর্ঘটনায় বিচলিত। অবাক হওয়া বিষয়, প্রতিটি অপ্রত্যাশিত অশুভ ঘটনায় রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া প্রায় একই ধরনের। শোকবার্তা ও ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি, তদন্ত কমিটি গঠন এবং গণমাধ্যমে কয়েক দিন আলোচনার পর বিষয়টি সবাই ভুলে যায়! (চলবে)।
খায়রুল আকরামখান
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized