
‘মা’ শব্দটি অতি মধুর ও স্পর্শকাতর। ‘মা’ হচ্ছেন মমতা, আবেগ, ভালোবাসা ও প্রশান্তির আশ্রয়স্থল। মায়ের শীতল স্পর্শেই নিমিষেই সব কষ্ট ও যন্ত্রণা দূর হয়ে যায়। মা শুধু প্রিয় শব্দই নয়, সন্তানের প্রিয় যতকিছু আছে তার সবকিছুর সঙ্গে মিশে আছে মমতাময়ী মা। চরম আনন্দ কিংবা কষ্টের সময়টায় প্রথমেই মনের মাঝে ভেসে ওঠে মায়ের মুখখানি। পৃথিবীর ইতিহাসে সব ধর্মই মাকে দিয়েছে মর্যাদাপূর্ণ আসন। শুধু মানবসভ্যতা নয়, মানুষ ছাড়াও অবুঝ প্রাণীদের মধ্যেও প্রবল মাতৃত্ববোধ লক্ষণীয়।
সেই সৃষ্টির আদিলগ্ন থেকেই মা যাবতীয় মমতার আধার ও কেন্দ্রবিন্দু। পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষাতেই মায়ের সমার্থ শব্দটি ‘ম’ ধ্বনি দিয়ে শুরু। আর সন্তানের প্রথম বুলিও হচ্ছে ‘মা’। তাই তো ‘মা’ শব্দটিতে এত আকুলতা! এত আবেগ! আত্মার এমন নিবিড় হৃদয়ের টান!
হাজারো উপমা কিংবা বাক্যে মা শব্দটির যথার্থ মাহাত্ম নির্ণয় করা বেশ কঠিন। বস্তুত, অব্যক্ত যন্ত্রণা সহ্য করে মা নিজের রক্তবিন্দু দিয়ে তিলে তিলে সন্তানকে বড় করেন। সন্তানের সঙ্গে মায়ের নাড়ির সম্পর্ক। মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন বলেই তো সন্তানের কোনো বিপদ-আপদ হলে মা সবার আগে জানতে পারে। তাই তো মা ও সন্তানের গভীরতম সম্পর্কের কাছে সব সম্পর্কই গৌণ, এ সম্পর্কের সঙ্গে অন্যকিছুর তুলনা কখনো হয় না। মূলত সৃষ্টিজগতে মায়ের কোনো তুলনা নেই। মায়ের তুলনা মা নিজেই। মায়ের মতো এমন নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবাসে না। নিজেকে নিঃস্ব করে মা শুধু সন্তানকে দিয়েই যান, কখনো কোনো প্রতিদানের আশা করেন না।
মা মানেই স্বার্থহীন নিখাদ ভালোবাসা, অকৃতিম মমতার অথই সমুদ্র। মায়ের স্পর্শ আর আঁচলতলেই জান্নাতের শান্তি! মায়ের সরল মুখ দেখলেই মিলে নির্মল প্রশান্তি! শত ভুল করেও, শত কষ্ট পেয়েও এক নিমেষেই ক্ষমা করে দিতে পারেন মা। সন্তান যত বড় হয়েই যাক না কেন সে তার মায়ের কাছে শিশু হয়েই ধরা দিতে চায়। মায়ের কোলে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে চায়।
বস্তুত, নিজেকে নিঃস্ব করে সর্বস্ব দিয়ে শুধু মা-ই সন্তানকে ভালোবাসতে পারে। নিজের আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম, আরাম-আয়েশ, সকল চাওয়া-পাওয়া বির্সজন দিয়ে শুধু মা-ই পারে সন্তানের জন্য যেকোনো কিছু ও সবকিছু করতে। তাই তো মায়ের তুলনা শুধু মা-ই। মায়ের স্থান সবার ওপরে। মায়ের ভালোবাসা ও স্নেহের সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।
একটি শিশু পৃথিবীতে আসার পর খুবই অসহায় থাকে। সে নিজের কোনো কাজই করতে পারে না। তখন মা তাকে বুকে টেনে নিয়ে বড় করে থাকেন। সুতরাং মা-ই হলেন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের প্রথম শিক্ষক, চিকিৎসক ও আশ্রয়দাতা। মা না থাকলে কোনো মানুষই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।
পৃথিবীর হাজারো রকম বদল হয় ; কিন্তু মায়ের ভালোবাসার কোনো বদল হয় না। মায়ের ভালোবাসা চিরন্তন ও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ নেয়ামত। সন্তানের অসুখের মায়েরা একই রকমভাবে রাত জাগেন, একই রকমভাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হন ; শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত একই রকমভাবে ভালোবাসেন।
সৃষ্টিজগতে মমতাময়ী মায়ের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যের কোনো শেষ নেই। নিজের গায়ের চামড়া দিয়ে মায়ের জন্য জুতা বানিয়ে দিলেও সারাজীবন কখনও মায়ের এক কণা দুধের ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়। এককথায় বলা যেতে পারে, মায়ের ঋণ অপরিশোধ্য। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায়, একজন সন্তানের প্রথম কর্তব্য হলো মাকে খুশি করা। মায়ের মনে কোনো দুঃখ না দেওয়া। মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করা। মাকে সবসময় সম্মান করা। মায়ের সেবা-যত্ন করা। মাকে ভালোবাসা। মায়ের সব আদেশ মেনে চলা। পৃথিবীর সব ধর্মেই মায়ের মর্যাদা উচ্চাসনে।
মায়ের কোনো বিকল্প নেই। জন্ম দেওয়া থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার যে প্রক্রিয়া পুরোটাই করেন মা। সুতরাং মাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন ও সময়ের প্রয়োজন নেই। মায়ের প্রতি অকৃতিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রতিদিনের, প্রতিমুহূর্তের ও প্রতিক্ষণের। তারপরও বিশ্বের সব মানুষ যাতে একসঙ্গে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সে জন্য প্রতি ইংরেজী বছরের মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক ‘মা দিবস’ পালন করা হয়। আর এই ‘মা দিবস’ উপলক্ষে বিশ্বের সব মায়ের জন্য রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। আমাদের সবাইকে অবশ্যই সব সময় মনে রাখতে হবে-শুধু বছরে এক দিন নয়, বছরের প্রতিটি দিন যেন আমরা মাকে মানেপ্রাণে ভালোবাসি, মাকে শ্রদ্ধা করি, মায়ের ত্যাগ যেন কখনো ভুলে না যাই, মায়ের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেষ্ট হই।
খায়রুল আকরাম খান
ব্যুরো চীফ : deshdorshon.com
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized