আমাদের দেশে সেকুলারিজমে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো ধর্মের সাথে সহাবস্থানের চেয়ে ধর্ম নির্মূলে বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকে। ধর্ম চর্চার কথা শোলেই তারা নাক শিটকায়। ধার্মীক বিশেষ করে ধর্মপরায়ণ মুসলিমকে তারা জঙ্গী তকমা দিতেও কোন্ঠাবোধ করে না।
বস্তুত, প্রগতিশীলতার দাবিদার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ছিল বাংলাদেশে সেকুলারিজমের আমদানীকারক। অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের বেশি বিরাগ ছিল। বরাবরই তারা ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষন করতো।
আমাদের দেশে যাতে ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধের পুনর্জাগরণ ঘটতে না পারে এবং ইসলামী দলগুলো সুসংগঠিত-শক্তিশালী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেজন্য পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার দীর্ঘ ১৫ বছরে বেঁছে বেঁছে আলেম-উলামা ও ইমামদেরকে অকথ্য নির্যাতন-নিপিড়ন করেছে। তাদের প্রভূ ভারতের উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী সরকারও একই কারণে সেদেশে মুসলিমদের উপর অমানবিক নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। এতে বুঝা যাচ্ছে, ইসলামের মতো মানবিক ধর্মকে তারা যমের মতো ভয় পায়।
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে সকল ধর্মের লোকদের মুক্ত ধর্মচর্চাকে ধর্মনিরপেক্ষতা মতবাদ দিয়ে ঠেকানো ছিল ভারতের তোষামোদকারী আওয়ামী লীগের পুরানো অপকৌশল। ‘৭২-এর সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ জুড়ে দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বেশ ফায়দা লুটে নিয়েছে। ‘পরিত্যাক্ত সম্পত্তি’ নামে নতুন আইন প্রণয়ন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব প্রচুর হিন্দুদের ঘরবাড়ি-দোকানপাট-জমিজমা জবরদখল নেয়। আওয়ামী লীগের এই নির্যাতন, লুটপাট ও জবরদখল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ওই সময় অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক তাদের সহায় সম্পত্তি ছেড়ে ভারতে যেতে বাধ্য হয়েছিল। অথচ কোনো সংখ্যালঘুন বাড়িঘর মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম বা জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা কখনো দখল করেনি। ইসলাম ধর্মেও অন্যের সস্পদ দখল নিষিদ্ধ তথা হারাম করেছে। ইসলামের এই নির্দেশ জামায়ত ইসলাম, মুসলিম লীগসহ ইসলামী অন্যান্য ইসলামী দলগুলো ওই সময় তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে ও এখনো করছে।
অথচ, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতিতে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সব সময় সংখ্যালঘুদের তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক হিসেবে মনে করতে থাকে। আর তাই অত্যন্ত কৌশলে সংখ্যালঘুদেরকে নিজেদের পক্ষে রাখতে সাম্প্রদায়িক দাঁঙ্গা বাধিয়ে এর ফায়দা নিতে চায় বিভিন্ন সময়ে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর হিন্দুদের মন্দির বা পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা বা স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, জমি দখল ও উচ্ছেদের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। পাশাপাশি ইসলামী চিন্তাবিদ-আলেম-উলামা ও ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধীদের উপরও অমানসিক নির্যাতন হয়েছে।
বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে একটি সুস্থ-সহিষ্ণু ও সম্প্রীতির রাজনৈতিক ধারা প্রাতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ একটি প্রতিবন্ধক স্বরূপ। সুতরাং সাস্প্রদায়িক সস্প্রীতি ও খাঁটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ’ নীতি অবশ্যই বর্জনীয়। (চলবে)।
খায়রুল আকরাম খান
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized