শুক্রবার সকাল ৭:২৪, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী ফাহমিদা প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি ফাহমিদা প্রজেক্ট: অব‌হে‌লিত নারী‌দের কর্মসংস্থানে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ

হযরত মুয়াবিয়া রা. এর শ্রেষ্ঠত্ব ও কৃতিত্ব

৭১৫ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) ছিলেন একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। রাসুলুল্লাহর জলিলুল কদর সাহাবী হওয়ার পাশাপাশি কাতেবে ওহী ও ইসলামি প্রথম নৌবহরের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর বরকতময় জবান থেকে বহু দোয়া ও সুসংবাদ উচ্চারিত হয়েছে। তাঁর বোন হযরত উম্মে হাবিবা (রাযি.) রাসুলুল্লাহর সহধর্মিণী এবং মুমিনদের মা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি দীর্ঘ ঊনিশ বছর চৌষট্টি লাখ বর্গমাইল তথা অর্ধপৃথিবী শাসন করেছেন। ইসলামি ইতিহাসের উজ্জ্বল পৃষ্ঠাগুলো, সোনালী পাতাগুলো তাঁর অবদান-ভূমিকা, কৃতি-কৃতিত্ব ও গুণ-গুণাবলীতে পূর্ণ।

হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে হাদিসে এসেছে,
হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া (রাযি.) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি: হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে কিতাব (কোরআন) ও গণিতের জ্ঞান দান করো এবং জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করো। (মুসনাদে আহমাদ: ১৭১৫২, আল্ মু’জামুল কাবির: ১০৬৬)

একবার হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ’হে আল্লাহ, মুয়াবিয়াকে হেদায়েত দান করুন, হেদায়েতের উপর অটল রাখুন এবং মানবতার জন্য হেদায়েতের উৎস বানিয়ে দেন। (তিরমিযী: ৩৮৪২, তারিখে কাবির: ৭/৩২৭)
অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন! মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রাযি.) আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে সহনশীল ও উদার। (তাত্বহিরুল-জিনান: ১২) তিনি মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর সাথেই ছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন সকল যুদ্ধে-অভিযানে।

পবিত্র কুরআন সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হলো ওহী লিপিকরণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) একদল জলিলুল-কদর সাহাবী নিযুক্ত করেছিলেন ওহী লেখার জন্য, যাদেরকে “ওহী লেখক” বলা হতো। তাঁদের মধ্যে হযরত মুআবিয়া (রাযি.) ছিলেন ষষ্ঠ। হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) লিখেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই লোকদের ওহীর লেখক নিযুক্ত করে ছিলেন, যারা ছিল খুব ন্যায়পরায়ণ ও অত্যন্ত বিশ্বস্ত। (ইজালাতুল খিফা)
ওহী লেখার পাশাপাশি তিনি আল্লাহর রাসুলের চিঠি লেখারও সৌভাগ্য লাভ করেন। (মু’জামে কাবির: ৪৭৪৮)

হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) সর্বদা রাসলুল্লাহ (সা.) -এর খেদমতে উপস্থিত থাকতেন, এমনকি সফরেও খেদমত করার সুযোগ খুঁজতেন। একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোথাও সফরে যাচ্ছেন, হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) খেদমতের জন্য পেছনে পেছনে গেলেন। পথিমধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর ওযুর প্রয়োজন হয়। পেছনে ফিরে দেখেন হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এতে নবীজি খুব মুগ্ধ হন। উযু করেন ও বলেন— ’মুয়াবিয়া! তুমি যদি শাসক হও, ভালো লোকদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এবং মন্দ লোকদের ক্ষমা করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬৯৩৩) হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) বলতেন, সে সময় থেকেই আমার আশঙ্কা ছিল যে, নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হবে এবং আমি কোনো না কোনো সময় খলিফা হবো।

তাঁর নিখুঁত খেদমত ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় রাসুলুল্লাহ (সা.) এতোটাই সন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর উপর বিদেশী মেহমানদের আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর ইন্তেকালের পর প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাযি.) -এর খিলাফতকালে যাকাত প্রত্যাখ্যানকারী, নবুওয়াত অস্বীকারকারী, নবুওয়াতের মিথ্যা দাবিদার ও মুরতাদদের ফেতনার বিরুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন এবং অনেক খ্যাতি-কীর্তি সম্পাদন করেছিলেন। হযরত ওমর ফারুক (রাযি.) এর খিলাফতকালে, যে সব বিজয় সংঘটিত হয়েছিল, তাতে হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) এর বিশিষ্ট ভূমিকা ও কৃতিত্ব ছিল। ইয়ারমুকের যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত বীরত্ব ও সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন।

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান গনি (রাযি.) -এর খিলাফতকালে হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) জিহাদের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। যখন হযরত উসমান গণি (রাযি.) নৌবহর প্রস্তুত করার অনুমতি দেন, তখন হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে নৌবহর প্রস্তুত করতে শুরু করেন এবং নৌ অভিযানের ঘোষণা দেন। যার প্রতিক্রিয়ায় জিহাদী চেতনায় নিবেদিত মুজাহিদিন সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। আটাশ হিজরিতে তিনি সকল গর্ব-গৌরব, উদ্যোগ-প্রস্তুতি, শক্তি-সমৃদ্ধি ও ইসলামী ইতিহাসের প্রথম নৌবহর নিয়ে “ভূমধ্যসাগরে” অবতরণ করেন। তখন সেখানকার অধিবাসীরা মুসলমানদের সাথে সন্ধি করে নেয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) পূর্ণ নৌশক্তি প্রায় পাঁচশত জাহাজের বিশাল নৌবহর নিয়ে সাইপ্রাসের দিকে রওনা হন এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করে সাইপ্রাস জয় করেন। এই বাহিনীর পরিচালক ও সেনাপতি ছিলেন স্বয়ং হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.)। হযরত আবু আইয়ুব আনসারী, হযরত আবু যার গিফারী, হযরত আবু দারদা, হযরত উবাদা ইবনে সামিত, হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাযি.) এর মতো জলিলুল-কদর সাহাবায়ে কেরামসহ অন্যান্য সাহাবীগণ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

বুখারী শরীফের বর্ণিনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের প্রথম বাহিনী যারা নৌ জিহাদ করবে, তারা নিজেদের জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিয়েছে।
গোটা উম্মত এ কথায় একমত যে, উম্মতের প্রথম বাহিনী যারা নৌ জিহাদ করেছিল, তাঁদের সেনাপতি ছিলেন হয়রত মুআবিয়া (রাযি.)। (বুখারী: ১/৪১০)

ইন্তেকালের পূর্বে হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) তাঁর পরিবারের লোকদের অসিয়ত করেছিলেন যে, একবার আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সফর করছিলাম, যখন তিনি আমার জামা কাঁধ থেকে ছিঁড়া দেখলেন, তখন আমাকে তাঁর জামা দিয়ে দিলেন, এটি আমি একবারের বেশি পরিধান করিনি, সংরক্ষণ করে রেখেছি। একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চুল ও নখ কাটলেন, আমি কিছু চুল ও নখ হেফাজত করে রেখেছি। আমি মারা গেলে গোসলের পর ওই নখ ও চুলগুলো আমার চোখের বৃত্ত ও চেহারায় রাখবে, রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর দেয়া বরকতময় জামাটি আমার বুকে পরিয়ে দিবে এবং কাফন দিয়ে ঢেকে দিবে। আশা করি, রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর এই বরকতময় বস্তু গুলোর ওছিলায় মহান আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন। (তারিখুল খুলাফা: ৭০)
অতঃপর ২২ শে রজব, ৬০ হিজরি সনে, কাতেবে ওহী, সিরিয়া ও সাইপ্রাস বিজয়ের সেনাপতি, দীর্ঘ ঊনিশ বছর ৬৪ মিলিয়ন বর্গমাইলের ওপর রাজত্ব কারী, রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর জলিলুল-কদর সাহাবি, হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) ৭৮ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন। হযরত জাহ্হাক ইবনে কায়স (রহ.) তার জানাযার ইমামতি করেন এবং তাকে দামেস্কের বাবুস্বাগিরে দাফন করা হয়। (মু’জামে কাবির: ১৯/৩০৫) রাদিয়াল্লাহু আনহু ওয়ারাদু আনহু।

লেখক: মুফতি মোজ্জাম্মেল হক রাহমানী
সিনিয়র শিক্ষক: মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা, বসুন্ধরা, ঢাকা।
ইমেইল: muftymujamel007@gmail.com

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের কঠিন হুশিয়ারি

‌ফি‌লি‌স্তি‌নের রক্তঝরা ইতিহাস

বিপদে ভেঙ্গে পড়া নয়, কৃতজ্ঞতাবোধ…

মান‌সিক অস্থিরতা দূর করতে কোন…

প‌রিবার ও সম্প্রী‌তির বন্ধন

অর্থই কি সব সু‌খের মূল?