সোমবার দুপুর ১:৪২, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

গ্রাহকরা আত‌ঙ্কিত: চার‌দি‌কে টাকা তোলার হি‌ড়িক (৩য় পর্ব)

৪৫২ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ব‌্যাংকিং ব‌্যবস্থাপনায় খেলা‌পি ঋণ এক‌টি প্রধান সমস‌্যা। বস্তুত যখন কো‌নো ঋণ বা ঋ‌ণের কি‌স্তি ফেরত পাওয়া যায় না বা সম্ভব হয় না ব‌্যাং‌কিং প‌রিভাষায় তা‌কেই খেলা‌পি ঋণ বলা হয়। এটি এক‌টি রাষ্ট্রীয় সমস‌্যা।  কিন্তু আমা‌দের দে‌শে প্রতি অর্থ বছ‌রেই খেলা‌পি ঋণ বৃদ্ধি পা‌চ্ছে। কেন্দ্রীয় বাং‌কের তথ‌্য অনুযায়ী, ২০২২ সা‌লের জুন পর্যন্ত দে‌শের ব‌্যাংকগু‌লোর বিতরণকৃত ঋ‌ণের প‌রিমান ছিল ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কো‌টি টাকা। এর ম‌ধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কো‌টি টাকা ছিল খেলা‌পি ঋণ, যা দে‌শের ব‌্যাংক খা‌তের মোট বিতরণকৃত ঋ‌ণের ৮ দশ‌মিক ৯৬ শতাংশ। এসব খেলা‌পি ঋ‌ণের জন‌্য প‌রোক্ষভা‌বে আমানতকারীরা ক্ষ‌তিগ্রস্ত হ‌চ্ছেন। কারণ এর সা‌থে আমানতকারীর মুনাফার ব‌্যাপার‌টি  জ‌ড়িত।

 উ‌ল্লেখ‌্য, আন্তজা‌র্তিক মানদন্ড অনুযায়ী, ৩ শতাংশের বে‌শি খেলা‌পি ঋণ থাক‌লেই ওই দে‌শের আ‌র্থিক খাত‌কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসা‌বে‌ বি‌বেচনা করা হয়। সেখা‌নে বাংলা‌দে‌শের আ‌র্থিক খা‌তে ঝুঁকিমুক্ত মাত্রায় চে‌য়ে ৩ গুণ বে‌শি। আমা‌দের দে‌শে প্রত্যেক ঋণ‌খেলা‌পিরা কো‌নো না কো‌নোভা‌বে ব‌্যবসার স‌ঙ্গে জ‌ড়িত।  ব‌্যবসায়ী হি‌সে‌বে তি‌নি সরকার থে‌কে অ‌নেক সু‌যোগ-সু‌বিধা গ্রহণ ক‌রেন।  গ্রাহক ও ব‌্যাং‌কের স্বা‌র্থে  ঋণ‌খেলা‌পি‌দে সকল সু‌বিধা কে‌ড়ে নি‌তে হ‌বে। এ‌ক্ষে‌ত্রে কো‌নো ধর‌নের আপস করা যা‌বে না। তা‌দের‌কে আই‌নের আওতায় এ‌নে কঠোর শা‌স্তি দি‌তে হ‌বে। কিন্তু শা‌স্তির নে‌তিবাচক প্রভাব যেন তার প্রতিষ্ঠা‌নে না প‌ড়ে সে ব‌্যবস্থা কর‌তে হ‌বে। কারণ ঋণ খেলা‌পি প্রতিষ্ঠা‌নে অ‌নেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আ‌ছেন, যারা নিরপরাধী। পাশাপা‌শি এ কথাও ঠিক যে, সব ব‌্যাংকই ঋণ লেখা‌পি নয়। য‌দি সব ব‌্যাংকই ঋণ খেলা‌পি হ‌তো, তা হ‌লে অ‌নেক আ‌গেই আমা‌দের ব‌্যাং‌কিং ব‌্যবস্থা ধ্বংস হ‌য়ে যে‌তো। তাই গ্রাহকগন জে‌নে-‌বু‌ঝে ব‌্যাং‌কে  আপনার আমানত রাখুন  এবং হুজু‌কে কান না দি‌য়ে নগদ টাকা উ‌ত্তোলন থে‌কে বিরত থাকুন।
এক‌টি ব‌্যাংক ইচ্ছা কর‌লেই অবসায়‌নে যে‌তে পা‌রে না। এ‌টি বন্ধ কর‌ার একক ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব‌্যাং‌কের হা‌তে। কো‌নো ব‌্যাংক যা‌তে  দেউ‌লিয়া  হ‌তে না পা‌রে সেই জন‌্য বর্তমা‌ন নিয়ম অনুযায়ী, এক‌টি নতুন ব‌্যাংক অনু‌মোদ‌নের জন‌্য ৪০০ কো‌টি টাকা বাংলা‌দেশ ব‌্যাং‌কে জামানত হি‌সে‌বে দি‌তে হয় এবং প্রতি অর্থ বছ‌রে এক‌টি নি‌র্দিষ্ট ফি দি‌য়ে অনু‌মোদনপত্র (লাই‌সেন্স) নবায়ন কর‌তে হয়। এছাড়াও গ্রাহ‌কের আমানত সুরক্ষার জন‌্য “ব‌্যাংক আমানত বীমা আইন-২০০০” অনুযায়ী, প্রতি‌টি ব‌্যাং‌ক বা আ‌র্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতি অর্থ বছ‌রে আমান‌তের বিপরী‌তে এক‌টি নি‌র্দি‌ষ্টি হা‌রে বীমা প্রিমিয়াম দি‌তে হয়। এছাড়াও প্রতি‌টি আমান‌তের বিপরতী‌তে ৮৭ থে‌কে ৯২ শতাংশ টাকা প্রতি‌টি ব‌্যাংক বি‌নি‌য়োগ কর‌তে পা‌রে এবং বা‌কি ৮ থে‌কে ১৩ শতাংশ টাকা কেন্দ্রীয় ব‌্যাং‌কে জমা রাখ‌তে হয়। এই নিয়‌মের ব‌্যত‌্যয় ঘট‌লে ব‌্যাংকগু‌লি‌কে কেন্দ্রীয় ব‌্যাং‌কের নিকট জবাব‌দি‌হি কর‌তে হয়।
ব‌্যাংকের তহ‌বিল ব‌্যবস্থাপনার এক‌টি বড় তত্ত্ব হ‌লো যে, সব আমানতকারীর একস‌ঙ্গে সব  টাকা নগদ করার কো‌নো দিনই দরকার হ‌বে না। গ্রাহক‌দের ব‌্যাং‌কে রাখা সঞ্চয় য‌দি সবার একসঙ্গে দরকার পড়‌তো, তা হ‌লে পৃ‌থিবী‌তে ব‌্যাং‌কিং ব‌লে কো‌নো কিছুরই আ‌বিস্কার হ‌তো না।
কো‌নো স‌ন্দেহ নেই, পৃ‌থিবীর অন‌্য অ‌নেক দে‌শের ম‌তো আমা‌দের এখা‌নেও একটা অর্থ‌নৈ‌তিক সংকট চল‌ছে। তেমনই কো‌নো স‌ন্দেহ নেই, এই সং‌কটের সময় কিছু মান‌ুষ খারাপ উ‌দ্দে‌শ্যে ব‌্যাং‌কের টাকা তু‌লে নেওয়ার বার্তা দি‌চ্ছে কিংবা হিসাব দিচ্ছ ব‌্যাংক দেউ‌লিয়া হ‌য়ে গে‌লে আপ‌নি আপনার আমান‌তের কতটুকু খোয়া‌বেন।
“‌দেশ শ‌্রীলঙ্কা হ‌চ্ছে” গুজব ছ‌ড়ি‌য়ে যারা দেখ‌লেন কো‌নো কিছুই শ্রীলঙ্কার ম‌তো হয়‌নি, তারাই এখন “ব‌্যাংকে টাকা ‌নেই, আমানত তু‌লে নিন” বলা শুরু ক‌রে‌ছে। এই সব সু‌বিধাবাদী ও গুজব রটনাকারীরা দেশ ও জা‌তির শত্রু। তা‌দের‌কে চি‌হিৃত ক‌রে দ্রুত বিচা‌রের আওতায় আনা  উ‌চিত।
অ‌প্রিয় হ‌লেও সত্যিই যে, আমা‌দের দে‌শে বর্তমা‌নে বৈ‌দে‌শিক মুদ্রার মজুত কম‌ছে, ডলার মা‌র্কে‌টে তারল‌্য কম‌ছে, টাকা দি‌য়ে ডলার কিন‌তে সমস‌্যা হ‌চ্ছে। কিন্তু টাকার তারল‌্য ক‌মে‌নি। বস্তুত টাকার তারল‌্য ও বৈ‌দে‌শিক মুদ্রার তারল‌্য এক জি‌নিস নয়। অর্থনী‌তি‌বি‌দের ম‌তে, আই এমএফ-এর ঋণ পাওয়ার মাধ‌্যমে আগামী বছ‌রের শুরু‌তে এই সংকট কে‌টে যা‌বে।
বাংলা‌দে‌শের ব‌্যা‌ং‌কিং ব‌্যবস্থা ১৬ লাখ ৩৭ হাজার কো‌টি টাকার মোট আমান‌তের মজবুত এক অর্থ‌নৈ‌তিক কাঠা‌মোর ওপর দাঁড়িয়ে আ‌ছে। ত‌বে সমস‌্যা যে নেই, তা নয়। কো‌নো কো‌নো ব‌্যাং‌কে মন্দ ঋ‌ণের সমস‌্যা আ‌ছে, কোথাও সুশাস‌নের সমস‌্যা আ‌ছে। তাই ব‌লে আপনার টাকা তু‌লে নেওয়া ম‌তো প‌রি‌স্থি‌তি তৈ‌রির প্রশ্নই ও‌ঠে না। উঠ‌লে এত দিনে এ দে‌শে দুই-একটা ব‌্যাংক ধ‌সে যে‌ত। কিন্তু তা হয়‌নি! কারণ, সব সমা‌লোচনার পরও ব‌্যাংক ব‌্যবস্থায় র‌য়ে‌ছে  কেন্দ্রীয় ওই তারল‌্য ও উদ্ধৃত তার‌ল্যের উপ‌স্থি‌তি আর র‌েয়ে‌ছে কেন্দ্রীয় ব‌্যাং‌কের নিয়‌মিত কড়া নজড়দা‌রি। এ সময় ফু‌লি‌য়ে-ফাঁ‌পি‌য়ে  আপনার ব‌্যাংক হিসাবের টাকা যারা অকার‌ণে ব‌্যাংক থে‌কে তু‌লে নি‌তে বল‌ছে, তারা আপনার ক্ষ‌তি ছাড়া কিছুই কর‌ছে না।
সুতরাং বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষি‌তে একজন স‌চেতন গ্রাহক‌কে নতুন হিসবা খোলার সময় বা পুরা‌নো হিসাবে লেন-‌দেন করার সময়  প্রথ‌মে ব‌্যাংক পছন্দ ক‌রে নি‌তে হ‌বে। ত‌বে ব‌্যাংক পছন্দ করার আ‌গে ক‌য়েক‌টি দিক বি‌বেচনা কর‌তে হ‌বে গ্রাহক‌কে। যেমন প্রথ‌মেই দেখ‌তে হ‌বে-ব‌্যাংক‌টি “ব‌্যাংক আমানত বীমা আ‌ইন-২০০০” দ্বারা নিয়‌ন্ত্রিত হ‌চ্ছে কিনা? ব‌্যাংক‌টির মান কেমন বা খেলা‌পি ঋ‌ণের হার কত? ব‌্যাংক‌টির প‌রিচালনা পর্ষ‌দে কারা আ‌ছেন? ঝুঁ‌কিপূর্ণ তা‌লিকায় ব‌্যাংক‌টির নাম আ‌ছে কিনা? এসব দিক বি‌বেচনায় রে‌খে আপ‌নি বাংলা‌দে‌শের যেকো‌নো  জ‌ায়গায় যে‌কো‌নো ব‌্যাং‌কের গ্রাহক হ‌তে পা‌রেন। আর গ্রাহক‌কে সব সময় ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে-ঘ‌রের সিন্দু‌কের চে‌য়ে ব‌্যাং‌কে টাকা রাখা নিরাপদ ও লাভজনক। অন‌্য কা‌রো কথায় কান দি‌য়ে অযথা নি‌জের ব‌্যাংক হিসাব থে‌কে টাকা তু‌লে ঘ‌রের সিন্দু‌কে রাখ‌বেন না। এ‌তে টাকার অবম‌ূল‌্যায়ন হ‌বে  এবং টাকাগু‌লো অলসভা‌বে সিন্দু‌কে প‌রে থাক‌বে। অনর্থক টাকা তু‌লে নি‌জের পা‌য়ে নি‌জে কুড়াল মার‌বেন না। সময় এ‌সে‌ছে প‌রিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে স‌ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। (আপাতত সমাপ্ত)
লেখক: খায়রুল আকরাম খান
ব‌্যু‌রো চীফ: দেশ দর্শন

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

মব জা‌স্টিস : প্রেক্ষিত বাংলা‌দেশ

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী…

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই…