শুক্রবার সন্ধ্যা ৬:৪৮, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী ফাহমিদা প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি ফাহমিদা প্রজেক্ট: অব‌হে‌লিত নারী‌দের কর্মসংস্থানে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ

স্ব‌প্নের সোনার বাংলা ক‌বে হ‌বে?

৩৮৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

আজ ১৬ ডি‌সেম্বর, বিজয় দিবস। ১৯৭১ সা‌লের এই দি‌নে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মরণপণ যু‌দ্ধের শে‌ষে বিজয় ছি‌নি‌য়ে এনেছিল বীর বাঙা‌লি। সেই হি‌সে‌বে, বাংলা‌দেশ স্বাধীনতা লাভ ক‌রে‌ছে আজ ৫২ বছর হতে চল‌ছে।  ত‌বে ৫১ বছর পূর্ণ হ‌য়ে‌ছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সম‌য়ে স্বাধীনতাপ্রা‌প্তির লক্ষ‌্যবিন্দু কি আমরা ছুঁ‌তে পে‌রে‌ছি? অ‌প্রিয় হ‌লেও স‌ত্যি, স্বাধীনতাপ্রপ্তির পর থে‌কে এ পর্যন্ত আমরা বাংলা‌দেশ‌কে স্ব‌প্নের কল‌্যাণকামী রাষ্ট্র হি‌সে‌বে প্রতিষ্ঠা কর‌তে পু‌রোপু‌রি ব‌্যর্থ হ‌য়ে‌ছি।

বস্তুত আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শোষ‌ণের শৃঙ্খল থে‌কে মুক্ত হওয়ার যুদ্ধ। শোষণমুক্ত সমাজ গড়াই ছিল বাঙা‌লি জা‌তির আজন্ম লা‌লিত স্বপ্ন। সাম‌্য, মান‌বিক মর্যাদা ও সামা‌জিক সু‌বিচার প্রতিষ্ঠার চেতনা লালন ক‌রে স্বাধীন ও সার্ব‌ভৌম যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন‌্য বাঙা‌লি মু‌ক্তিযু‌দ্ধে ঝাঁ‌পি‌য়ে পড়ে‌ছিল, সেই রাষ্ট্র কি আমরা পে‌য়ে‌ছি? বাঙা‌লির সেই চেতনা পেছ‌নে আরও এক‌টি লক্ষ‌্য কাজ ক‌রে‌ছিল, তা হ‌লো গণতা‌ন্ত্রিক ও অসম্প্রদা‌য়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। সেই গণতা‌ন্ত্রিক ও অসাম্প্রদা‌য়িক রাষ্ট্র কি আমরা পে‌য়ে‌ছি?

স্বাধীনতার ৫২ বছ‌রে বিচার  বিভাগ‌কে ভূলু‌ন্ঠিত করা হ‌য়ে‌ছে, বাক স্বাধীনতা‌কে ক‌ঠোরভা‌বে নিয়ন্ত্রণ করা হ‌য়ে‌ছে,  সং‌বিধান‌কে নি‌জে‌দের সু‌বিধা‌র্থে প্রতি‌টি সরকার বার বার কতর্ন ক‌রে‌ছে। এই নি‌য়ে বাংলা‌দে‌শের সং‌বিধান‌কে মোট ১৭ বার সং‌শোধন করা হ‌য়ে‌ছে। ত‌বে এসব সং‌শোধনীর ম‌ধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপ‌তি জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সং‌শোধনী, প্রয়াত রাষ্ট্রপ‌তি হুসাইন মোহাম্মদ এরশা‌দের সপ্তম সং‌শোধনী, ত্রয়োদশ সং‌শোধনী বি‌শেষ উ‌ল্লেখ‌যোগ‌্য। কিন্তু সং‌বিধা‌নের ষোড়শ সং‌শোধনী সু‌প্রিম কোর্ট কর্তৃক বা‌তিল হ‌য়ে‌ছে।

আর প্রশাস‌নিক অদক্ষতা, আমলা-রাজনী‌তিক‌দের দ্বন্দ্ব ও সর্ব‌ক্ষে‌ত্রে দুর্নী‌তি ক্রমেই বাড়‌ছে। কিছু‌তেই এর লাগাম টে‌নে ধরা যা‌চ্ছে না। বাংলা‌দেশ আজ সীমাহীন দুর্নীতি‌তে নিম‌জ্জিত। বাংলা‌দেশ‌কে দুর্নী‌তি‌তে এক নম্বর দেশ হি‌সে‌বে টিআই-এর প্রথমবা‌রের ম‌তো চি‌হিৃত করা হয় ২০০১ সা‌লে। এ সময়ে টিআই মোট ৯১ টি  দে‌শের প্রাপ্ত তথ‌্যউপা‌ত্তের ভি‌ত্তি‌তে জ‌রিপ রির্পোট প্রকাশ ক‌রে। এক‌টি কথা সবাই‌কে ম‌নেরাখ‌তে হ‌বে, যুদ্ধ হয়  বি‌রোধী শ‌ক্তির বিরু‌দ্ধে, অত‌্যাচারীর বিরু‌দ্ধে, দুর্নী‌তির বিরু‌দ্ধে। বঞ্চনা, নিপীড়ন, অত‌্যাচার, অ‌বিচার ও নি‌স্পেষণ থে‌কে মু‌ক্তির জন‌্যই মু‌ক্তিপাগল জা‌তি সে‌দিন জা‌তি-ধর্ম‌নি‌র্বি‌শে‌ষে মু‌ক্তিযুদ্ধ ক‌রে‌ছিল।

বাংলা‌দেশ থে‌কে বি‌দে‌শে প্রতি‌দিনই কো‌টি কো‌টি টাকা পাচার হ‌চ্ছে। ওয়া‌শিংটন ভি‌ত্তিক গ‌বেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবোল ফিন‌্যা‌ন্সিয়াল ইন্ট‌গ্রিটি (‌জিএফআই) ২০২২ সা‌লের ২ মে তা‌রি‌খে বাংলা‌দে‌শের অর্থ পাচার সম্প‌র্কে এক তথ‌্য প্রকাশ ক‌রে‌ছে, তা‌তে দেখা যায় ২০০৫ থে‌কে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলা‌দেশ থে‌কে বি‌দে‌শে পাচার হ‌য়ে‌ছে ৭ হাজার ৫৮৫ কো‌টি ডলার, যা বাংলা‌দেশী মুদ্রায় ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কো‌টি টাকা! অ‌ভিজ্ঞ মহ‌লের ম‌তে, বাংলা‌দে‌শের ভেত‌রে দুর্নী‌তির মাধ‌্যমে যে অর্থ উপার্জন করা হয় সে‌টি মূলত হু‌ন্ডির মাধ‌্যমেই পাচার হ‌চ্ছে। আবার অ‌নেক ব‌্যবসায়ী যে রপ্তা‌নি ক‌রেন সেখান থে‌কে অ‌র্জিত এক‌টি বড় অংশ বি‌দে‌শের ব‌্যাং‌কে রাখ‌ছেন। এভা‌বেই রাষ্ট্রীয় কোষাগার খা‌লি হ‌চ্ছে।

বর্তমা‌নে  জা‌তীয় সংস‌দে ও সং‌স‌দের বাই‌রে স‌ত্যিকারের শক্তিশা‌লি বি‌রোধী দলের অ‌স্তিত্ব তেমন নাই বল‌লেই চ‌লে। ফ‌লে রাজনী‌তি‌তে মহাশূন‌্যতা বা  গভীর সংক‌টের সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে। আমা‌দের সবাই‌কে সব সময় স্মরণ রাখ‌তে হ‌বে শ‌ক্তিশা‌লি বি‌রোধীদল ছাড়া গণতন্ত্র শক্ত‌পোক্ত হয় না। বর্তমান প্রেক্ষাপ‌টে  রাজনী‌তি এখন রাজ‌নৈ‌তিক নেতা‌দের হা‌তে নেই। এটা এখন নিয়‌ন্ত্রিত হ‌চ্ছে-দুর্বৃত্ত,চাঁদাবাজ, লা‌ঠিয়াল‌দের দ্বারা। তাই সমা‌জে দিন দিনই  গুম-খুন-লুন্ঠন-ধর্ষণ-টাকা পাচার দ্রুত গ‌তি‌তে বাড়‌ছে। মানু‌ষের ম‌ধ্যে মান‌বিক মূল‌্যবোধ ও নৈ‌তিকতা  জ‌্যা‌মি‌তিক হা‌রে  হ্রাস পা‌চ্ছে। সবাই এখন টাকা পেছ‌নে দৌড়া‌চ্ছে। এ ক্ষে‌ত্রে কেউ বৈধ-অ‌বৈধ এর বাছ বিচার কর‌ছে না। চার‌দি‌কে চল‌ছে হ‌রিলু‌টের রাজত্ব। এই সু‌যো‌গে ক‌তিপয় লোক আঙ্গুল ফু‌লে কলাগাছ হ‌চ্ছে। সু‌যোগ সন্ধানী এসব লো‌কের কার‌ণে বাংলা‌দে‌শে মধ‌্যবিত্ত ও নিম্ন‌বিত্ত দিন দিন নিঃস্ব হ‌চ্ছে। এ‌তে ধনী-গরী‌বের ব‌্যবধান বৃ‌দ্ধি পা‌চ্ছে। বিশ্ব ব‌্যাং‌কের ২০১৮ সা‌লে প্রকা‌শিত প্রতি‌বেদনে ধনী-গরী‌বের বৈষ‌ম্যের ক্ষে‌ত্রে বাংলা‌দে‌শের অবস্থান পঞ্চম। এই তা‌লিকায় বাংলা‌দে‌শের সাম‌নে এ‌শিয়ার দেশগু‌লোর ম‌ধ্যে শুধু ভারত র‌য়ে‌ছে। বা‌কি তিন‌টি দেশ হ‌লো আ‌ফ্রিকার নাইজে‌রিয়া, ক‌ঙ্গো ও ই‌থিও‌পিয়া। এই অসম ব‌্যাবধা‌নের ফ‌লে সমা‌জে নী‌তি-‌নৈ‌তিকতা বিব‌র্জিত মান‌সিকতা সম্পন্ন সু‌বিধাবাদী এক বি‌শেষ শ্রেণি মানু‌ষের উত্থান ঘ‌টে‌ছে।

এসব মানু‌ষের লোভ-লালসা ও স্বাভাব-চ‌রিত্র এতই মর্যাদাহা‌নিকর যে তা‌দের কথা উচ্চারণ কর‌তেও লজ্জা লা‌গে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর পরই মু‌ক্তি‌যোদ্ধাদের বি‌শেষ বি‌শেষ সু‌যোগ-সু‌বিধা ঘোষণা ক‌রে। সরকা‌রের এই ঘোষণার স‌ঙ্গে স‌ঙ্গে কিছু ধুরন্ধর মানুষ মু‌ক্তিযুদ্ধ‌কে ব‌্যবহার ক‌রে ব‌্যক্তিগত ফায়দা  লোটার চেষ্টায় ব‌্যতিব‌্যস্ত হ‌য়ে প‌ড়ে! এসব চি‌হিৃত ধুরন্ধর‌দের লো‌ভের মাত্রা দিন দিন বে‌ড়েই চল‌ছে। দুঃখজনক হ‌লো এটাই যে  সরকা‌রের কিছু কিছু মন্ত্রী, রাজ‌নৈ‌তিক নেতা থে‌কে শুরু ক‌রে স‌চিব, পু‌লিশ সদস‌্যসহ সমা‌জের নানা শ্রেণির মানুষ মু‌ক্তি‌যোদ্ধার তা‌লিকায় নি‌জে‌দের নাম ওঠা‌নোর অপ‌চেষ্টায় লিপ্ত হ‌য়ে‌ছে। য‌দিও এরই ম‌ধ্যে বেশ ক‌য়েক হাজার  ভুয়া মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সনদ বা‌তিল করা হ‌য়ে‌ছে। উ‌ল্লেখ‌্য, ১৯৯৮ সা‌লের আগ পর্যন্ত মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌দের চার-পাঁ‌চ‌টি তা‌লিকা প্রণয়‌নের উ‌দ্যোগ নি‌লেও এর চূড়ান্ত তালিকা প্রকা‌শিত হয়‌নি। এঅবস্থায় ঐ বছ‌রের শে‌ষের দি‌কে তৎকালীন মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কল‌্যাণ ট্রা‌ষ্টের মহাপ‌রিচালক ব্রিগে‌ডিয়ার জেনা‌রেল আ‌মিন আহ‌মেদ চৌধুরী বি‌ভিন্ন সেক্ট‌রের তথ‌্য নি‌য়ে এক‌টি তা‌লিকা ভলিউম আকা‌রে প্রকাশ ক‌রেন, যা‌তে ৭০ হাজার ৮৯৬ জন মু‌ক্তি‌যোদ্ধা‌কে তালিকাভুক্ত করা হয়। কিন্তু ২০২২ সা‌লের ২৪ মার্চ বি‌ভিন্ন গণমাধ‌্যকে মু‌ক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজা‌ম্মেল হক ব‌লে‌ছেন, প্রকৃত মু‌ক্তি‌যোদ্ধার সংখ‌্যা দুই লা‌খের বে‌শি হ‌বে না। ব‌্যাপার‌টি বিস্ময়করও ব‌টে!

সে‌দিন হা‌তে অস্ত্র নি‌য়ে যারা  বিশাল পাকবা‌হিনীর মোকা‌বিলা ক‌রে‌ছি‌লেন, সেই অকুতোভয় মু‌ক্তি‌যোদ্ধারা এসব ভন্ড মু‌ক্তি‌যোদ্ধা কর্মকান্ড ও সমা‌জের অবক্ষ‌য়ের করুন‌চিত্র দে‌খে দুঃখ-হতাশয় দীর্ঘশ্বাস ফেল‌ছে।

বাংলা‌দে‌শে বিচার বা প্রতিকার যেন সব‌লের জন‌্য, দুর্ব‌লের জন‌্য নয়। আবার সবল ও দুর্ব‌লের মধ্যেও আ‌পে‌ক্ষিকতা ও শ্রেণি‌ভেদ র‌য়ে‌ছে। য‌দিও সং‌বিধা‌নে বিচার পাওয়ার ক্ষে‌ত্রে সবার সমান অ‌ধিকারের কথা বলা হ‌য়ে‌ছে। বিচার বিভা‌গে নির্বাহী বিভা‌গের অযথা হস্ত‌ক্ষেপ, বিচারক‌দের গা‌ফিল‌তি ও বিচারক‌দের স্বল্পতার জন‌্য এমন‌টি হ‌চ্ছে। আর এ কার‌ণেই বিচার পাওয়ার ক্ষে‌ত্রে দীর্ঘসূ‌ত্রিতা, নতুন নতুন মামলার সংখ‌্যা বাড়‌ছে ও পুরা‌নো মামলাগু‌লো ঝু‌লে আ‌ছে। গ‌বেষক‌দের ম‌তে, বর্তমা‌নে ঝু‌লে থাকা মামলার সংখ‌্যা ৩৩ লা‌খেরও বে‌শি। তা‌দের ম‌তে, নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভা‌গের ম‌ধ্যে সম্পর্ক  ও সমন্বয়হীনতার কার‌ণে এমন‌টি হ‌চ্ছে। বস্তুত আমরা সবাই বিচারব‌্যবস্থার স্বাধীনতা চাই। রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো ক্ষমতায় না থাক‌লে বিচার বিভা‌গের স্বাধীনতা জন‌্য শোরগাল তো‌লে। আবার ক্ষমতায় গে‌লে দেখা যায়, `যে  লঙ্কায় যায় সেই রাবণ হ‌য়ে যায়।` কো‌নো কো‌নো সময় একশ্রেণির বিচার‌কদের ভূ‌মিকা দে‌খে ম‌নে প্রশ্ন জা‌গে তারাও বিচার বিভা‌গের স্বাধীনতা চান কিনা না‌কি ক্ষমতাসীনদের সন্তুষ্টি ক‌রে নি‌জের প‌দোন্ন‌তি চান? এই য‌দি হয় বিচার বিভা‌গের অবস্থা, তা হ‌লে মানুষ যা‌বে কোথায়?

আমা‌দের দে‌শের বে‌শিরভাগ রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর ম‌ধ্যে ন‌্যূনতম গণতা‌ন্ত্রিক চর্চা নেই; দ‌লের সভাপ‌তি বা সাধারন সম্পাদ‌কের সিদ্ধান্ত বিনাবা‌ক্যে সবাই‌কে মে‌নে চল‌তে হয়। মূলত শুদ্ধ স্বৈরতা‌ন্ত্রিকতার চর্চা শুরু হয় রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর মাধ‌্যমে। অথচ তারা নি‌জে‌দের‌ দল‌কে গণতা‌ন্ত্রিক দল হি‌সে‌বে দাবি ক‌রে! নির্বাচ‌নের সময়  যার টাকা ও পে‌শি শ‌ক্তি বে‌শি থা‌কে সে-ই দ‌লের ম‌নোনয়ণ পায়।‌কিন্তু তৃর্নমূ‌লের সৎ-‌নিষ্ঠাবান পরী‌ক্ষিত নেতা-কর্মীরা  প্রায় সময়ই সেই সু‌যোগ থে‌কে ব‌ঞ্চিত হয়। ফ‌লে রাজনী‌তি‌র ময়দা‌নে নে‌মে আ‌সে ঘোর সংকট। এখ‌নো আমরা এই সংক‌টের ম‌ধ্যেই সময় পার কর‌ছি। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছ‌রেও এই সংকট থে‌কে বের হ‌তে পার‌ছি না।

দীর্ঘ এই ৫২ বছ‌রে আমা‌দের দে‌শে ক্রমাগত অবকাঠা‌মোগত উন্নয়ন হ‌চ্ছে, কিন্তু পাশাপা‌শি সমাজ থে‌কে সাম‌্য ও ন‌্যায়‌ভি‌ত্তিক অসাম্প্রদা‌য়িক চেহারাটা দিন দিনই হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে। এই ৫২ বছ‌রে অ‌নেক সরকারই ক্ষমতায় এস‌ছে; তারা সাধারণ মানুষ‌কে অ‌নেক নতুন কিছু দেওয়ার মিথ‌্যা প্রলা‌পের র‌ঙে আঁকা ছ‌বি দে‌খি‌য়েছে। মানুষও মনে ক‌রে‌ছে আমরা অ‌নেক কিছু পা‌চ্ছি! কিন্তু সময় হা‌রি‌য়ে জনগণ বোঝ‌তে পা‌রছে এটা ছিল রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো ক্ষমতা দখল করার কূট কৌশল। এভা‌বে মানুষ প্রতি‌নিয়তই প্রতা‌রিত হ‌চ্ছে! ত‌বে একথা স‌ত্যি যে, প্রতি‌টি রাজ‌নৈ‌তিকদল ক্ষমতায় আসার পর রা‌ষ্ট্রের উন্নয়‌নের জ‌ন্যে শত শত প‌রিকল্পনা প্রনয়ণ ক‌রে এবং তা বাস্তবায়‌নের  আপ্রাণ চেষ্টাও ক‌রে। কিন্তু হ‌্যায়! কো‌নো সরকারই তা‌দের প‌রিকল্পনা পু‌রোপু‌রি বাস্তবায়ন কর‌তে পা‌রে না। কারণ পরবর্তীকা‌লে অন‌্য রাজ‌নৈ‌তিকদল ক্ষমতায় এ‌সে নি‌জে‌দের বাহাদুরী জা‌হির করার জ‌ন্যে পূর্ববর্তী সরকা‌রের যাব‌তীয় প‌রিকল্পনা  স্থ‌গিত ক‌রে দেয়।

এতে রাষ্ট্রীয় ব‌্যয় বৃ‌দ্ধি পা‌য় এবং অগ্রগ‌তি বাধাগ্রস্থ হয়। আমা‌দের দে‌শে সরকা‌রি দলগু‌লো আজীবন ক্ষমতায় থাক‌তে চায়।  এধর‌নের হীনস্বার্থ চ‌রিতার্থ করার জ‌ন্যে বি‌রোধী মত-দর্শন-দল ও গণমাধ‌্যম‌কে ক‌ঠোরভা‌বে নিয়‌ন্ত্রণ অব‌্যাহত রা‌খে।  তাই প্রা‌কৃ‌তিক দু‌র্যোগ ও জা‌তিয় সংকট মোকা‌বিলাকা‌লে সরকা‌রি ও বি‌রোধী দলগুে‌লোর ম‌ধ্যে  কখ‌নো কো‌নো ধর‌নের ঐকমত‌্য হয় না। আমা‌দের দেশের সরকারি ও বি‌রোধী দলগু‌লোর ম‌তো এমন সংকীর্ণ‌চিত্ত পৃ‌থিবীর অন‌্যকো‌নো দে‌শে সচরাচর দেখা যায় না! সরকা‌রি ও বি‌রোধী দলগু‌লোর ম‌ধ‌্যকার এমন সাপে-‌নেউ‌লে সম্পর্ক প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিরাট অন্তরায়।

আইন‌কে কেন্দ্র ক‌রে রাষ্ট্র প‌রিচালনার যে সংস্কৃ‌তি গ‌ড়ে তোলার প্রচেষ্টা দরকার ছিল, রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লো সম্পূর্ণভা‌বে তা এ‌ড়ি‌য়ে গে‌ছে। ব‌্যক্তির চেহারা,অবস্থান দে‌খে রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে। ফ‌লে স্বাধীনতার পর থে‌কেই এ পর্যন্ত বাংলা‌দে‌শে ব‌্যক্তির সিদ্ধান্ত প্রধানতম চা‌লিকা শ‌ক্তি হি‌সে‌বে কার্যকর হ‌য়ে‌ছে,  আইন নয়। বাস্ত‌বিকপ‌ক্ষে রাষ্ট্র কো‌নো ব‌্যক্তি কিংবা রাজ‌নৈ‌তিক দ‌লের ইচ্ছানুযায়ী প‌রিচা‌লিত হওয়া উ‌চিত নয়। আই‌নের নি‌রি‌খে সব‌কিছু প‌রিচা‌লিত হওয়া দরকার। রাষ্ট্রীয় কাঠামো‌তে এই অ‌পরিহার্য গুণ প্রয়োগ কর‌তে না পারায় দেশীয় সব সাং‌বিধানীক প্রতিষ্ঠান ব‌্যক্তির ইচ্ছা-অ‌নিচ্ছায় প‌রিচা‌লিত হ‌চ্ছে। তাই আমা‌দের কাং‌খিত গণতন্ত্র খর্ব হ‌চ্ছে। গণতন্ত্রহীনতার লম্বা সংস্কৃ‌তি আমা‌দের সা‌র্বিক অগ্রগ‌তি‌কে থম‌কে দি‌চ্ছে।

আমা‌দের সমসাম‌য়িক স্বাধীন দেশগু‌লো  আজ বিশ্ব‌কে নেতৃত্ব দি‌চ্ছে। কিন্তু হ‌্যায়!  মানবসম্পদ ও প্রাকৃ‌তিক সম্পদ অ‌নেক থাকার পরও  আমরা যেই তি‌মি‌রে ছিলাম, সেই তি‌মি‌রেই র‌য়ে গে‌ছি। ক‌বে  পার‌বো আমরা যাবতীয় অন‌্যায়-অ‌বিচার, বৈষম‌্য-অসমতা, অসহিষ্ণুতা-অমান‌বিকতা, দুর্নী‌তি-স্বজনপ্রী‌তি  চিরত‌রে দূ‌র ক‌রে  সাম‌্য এবং ন‌্যায়‌ভি‌ত্তিক অসাম্প্রদা‌য়িক  কল‌্যাণকামী স্ব‌প্নের বাংলা‌দেশ প্রতিষ্ঠা কর‌তে? না‌কি আমা‌দের  সেই স্ব‌প্নের সোনার বাংলা অধরাই র‌য়ে যা‌বে?

‌লেখক: খায়রুল আকরাম খান

ব‌্যু‌রো চীফ: দেশ দর্শন

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের কঠিন হুশিয়ারি

‌ফি‌লি‌স্তি‌নের রক্তঝরা ইতিহাস

বিপদে ভেঙ্গে পড়া নয়, কৃতজ্ঞতাবোধ…

মান‌সিক অস্থিরতা দূর করতে কোন…

প‌রিবার ও সম্প্রী‌তির বন্ধন

অর্থই কি সব সু‌খের মূল?