
কক্সবাজার জেলার ঘটনা:
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হবার পর একরামুল হক ও তার মেয়েদের ছবি ফেসবুকের নিউজ ফিড ভরিয়ে তুলেছে। মিডিয়াগুলোতেও একরাম হত্যাকান্ডের ঘটনা ব্যাপক ভাবে কাভারেজ পাচ্ছে। একরাম যে নির্দোষ ছিলো-সে বিষয়টিও ব্যাপক ভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালের ২৬ মে রাতে টেকনাফের কাইযুকখালী পাড়া এলাকা থেকে একরামুল হককে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী (র্যাব) তুলে নিয়ে যায়। পরের দিন কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে তার গুলিবিদ্ধ লাশ মেলে।

ক্রসফায়ারের নামে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটা শুরু হয়েছে বহু আগে। তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা যাবার পর এটা মহামারী রূপ নিয়েছে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরাম হত্যাকান্ডের ঘটনা ব্যাপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে। আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য যে, অন্যান্য হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটনাগুলো সে তুলনায় ছিটেফোঁটাও হয়নি বা হচ্ছে না। যতটুকু জানা গেছে কাউন্সিলর একরামের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। এদের ছবি ব্যাপক ভাবে ভাইরাল হয়েছে।

হবিগঞ্জ জেলাতেও এ ধরণের খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর চুনারুঘাট পৌর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইউনুছ আলীকে তার ঘর থেকে ধরে নিয়ে যায় চুনারুঘাট থানা পুলিশ। পরে ইউনুছ আলীর ঘাড় ও হাত ভেঙ্গে দিয়ে ক্রসফায়ারের নামে খুন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। ইউনুস আলী বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। একরামুল ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। ইউনুস আলীকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। একরামুল হক’কে জমি সংক্রান্ত কাজে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। এ দু’জনকেই হত্যা করা হয়েছে মাদক ব্যবসার অভিযোগে। দু’টি ঘটনার মধ্যে রাজনৈতিক ডিফারেন্স ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য তেমন ডিফারেন্স নেই। ডিফারেন্স শুধু একটাই একরামুল হকের পরিবারের কাছে অডিও রেকর্ড ছিলো। ইউনুস আলীর পরিবারের কাছে কোনো অডিও রেকর্ড ছিলো না। তাই একরামুল হকের সন্তানদের আহাজারি সবার কানে পৌঁছেছে। ইউনুসের সন্তানদের আহাজারি কারো কানে পৌছেনি।

লক্ষ্মীপুরের ঘটনা:
২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় লক্ষ্মীপুরের ডাক্তার ফয়েজ আহম্মদের বাড়ীর গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করে র্যাব ফোর্স। ফয়েজ আহমেদকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তার বাড়ীর ছাদে। সেখানেই তাকে খুন করা হয়। বাড়ীতেই তার স্ত্রী সন্তানরা ছিলো। তারা শুনেছে ফয়েজ আহমেদের চিৎকার, গুলি করার শব্দ, র্যাব ফোর্সের বুটের আওয়াজ। বাড়ীর ছাদে ডাক্তার ফয়েজের মাথায় গুলি করে তার লাশ নীচে ফেলে দেয়া হয়। এরপর র্যাব ফোর্স তার বড় ছেলেকেও খোঁজাখুঁজি করে। তাকে পায়নি বলে সেদিন সে প্রাণে বেঁচে যায় সে। র্যাব-এর খুনিরা ফয়েজ আহমেদ-এর লাশ লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। ডাক্তার ফয়েজের কোনো অপরাধ ছিলো না। অপরাধ একটাই তিনি জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

রাজধানী ঢাকার ঘটনা:
২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় পুলিশের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনির নিহত হবার নিউজ মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। বাস্তব ঘটনা হলো, এর আগের দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেইট থেকে ডিবি পুলিশ নুরুজ্জামান জনিকে তুলে নিয়ে যায়। রাতে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করে জনিকে খুন করা হয়। জনির শরীরে ৫ টি বুলেট হিট করার পর জনি বলেছিলো, আমি আর রাজনীতি করবো না। আমার ৭ মাসের অন্তঃসত্বা বউকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে যাবো। আমাকে বাঁচতে দিন।

জানা যায়, মোট ১৭ টা গুলি করা হয়েছিল জনিকে। জনির স্ত্রী বলেছিল ১৬ টা গুলি সারা শরীরে করার পরও বেঁচে ছিলো জনি। ১৭ নাম্বার গুলিটা মাথায় করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় তার। জনির সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধ ছিলো না। অপরাধ একটাই সে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।

এটাও রাজধানী ঢাকার ঘটনা:
একই সময়ে জামায়াত নেতা ইমরুল কায়েসকে হত্যা করা। তার বিরুদ্ধেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা অপরাধ ছিলো না। তিনি নড়াইল পৌ্রসভার জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিলেন। তার অপরাধ একটাই তিনি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এ ঘটনার পর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টটি এ রকম: রাজধানীর মতিঝিলে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন নড়াইল পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস (৩৪)। গতকাল সোমবার ভোরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। তার শরীরে ১৯টি গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমরুল জামায়াতে ইসলামীর কর্মী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি। তার স্বজনরা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর নারিন্দা এলাকার একটি মেস থেকে ডিবি পরিচয়ে তাকে ধরে নেয়। এরপর তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডিবির পূর্ব বিভাগের মতিঝিল জোনাল টিম ও খিলগাঁও জোনাল টিম মতিঝিল এজিবি কলোনি ও আইডিয়াল কলেজের মধ্যবর্তী জায়গায় ছয়-সাতজন সন্দেহভাজনকে দেখে। সন্দেহভাজনরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে ও গুলি করা শুরু করে। এরপর ডিবির সদস্যরাও ১৭টি পিস্তলের ও ২৩টি শটগানের গুলি ছোড়েন। ডিবির দাবি সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে মারা যান ইমরুল। ঘটনাস্থল থেকে গুলিভর্তি পিস্তল ও পাঁচটি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
সুরতহাল প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তির বুকের বাঁ পাশে ছয়টি, বাঁ হাতের কনুইয়ের নিচে একটি গুলির ক্ষত ও কনুইয়ের ভেতর দিয়ে গুলি বের হয়ে যাবার আরেকটি ক্ষত রয়েছে। ডান পাশের বগলের কাছে একটি, ডান বাহুর ওপরে আরেকটি, ঘাড়ের ডান পাশে কানের নিচ দিয়ে আরেকটি এবং পিঠের ওপর বাঁ দিকে তিনটি ও ডান দিকে তিনটি এবং পেছনে কোমরের ওপর আরও দুটিসহ মোট ১৯টি গুলির চিহ্ন রয়েছে।
ডিবি জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে নড়াইল সদর থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। নড়াইল সদর থানার ওসি শেখ মতিয়ার রহমান জানান, সন্দেহভাজন হিসেবে থানায় দায়ের হওয়া অনেকগুলো মামলার আসামি ইমরুল কায়েস। এর মধ্যে পুলিশের ওপর হামলার মামলাটি উল্লেখযোগ্য।
পুলিশ জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নড়াইল পৌরসভার ডুমুরতলার তিন রাস্তার মোড়ে পুলিশের সাথে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সদর থানার ওসি (তদন্ত) মুক্তার হোসেন গুরুতর জখম হন। এতে ৭৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও আড়াই থেকে তিন হাজার আসামি করা হয়। ইমরুল এ মামলার ৪৪ নম্বর আসামি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আসা ইমরুলের বন্ধু ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা জানান, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে শিবির করতেন ইমরুল। পরে জামায়াতে যোগ দেন। মামলার আসামি হয়ে ঢাকায় এসে তেজগাঁওয়ের একটি কলেজে আইন পড়ছিলেন তিনি।
ইমরুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তার সাথে কোনো কথা হয়নি। শনিবার রাতে ইমরুলের নম্বর থেকে তার ফোনে মিসড কল আসে। তিনি ফোন করলে অপর প্রান্তে অন্য একজন লোক ফোন ধরে বলেন, ‘আপনার স্বামীর সাথে আর কোনো দিন দেখা ও কথা হবে না।’
ইমরুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে তার সাথে কোনো কথা হয়নি। শনিবার রাতে ইমরুলের নম্বর থেকে তার ফোনে মিসড কল আসে। তিনি ফোন করলে অপর প্রান্তে অন্য একজন লোক ফোন ধরে বলেন, ‘আপনার স্বামীর সাথে আর কোনো দিন দেখা ও কথা হবে না।’
জান্নাতুল জানান, শুক্রবার গভীর রাতে ইমরুলকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তার দাবি, ইমরুলকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এর বিচার চান। ইমরুলের বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। তার একটি মেয়ে রয়েছে। দৈনিক প্রথম আলো, ২০ জানুয়ারি ২০১৫ইং। ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে পুলিশ ১৩টি মামলার ফিরিস্তি দিলেও মামলাগুলো সবই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ঝিনাইদহের ঘটনা:
২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল। ঝিনাইদহের শিবির কর্মী সোহানকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে সোহানের পিতা মোঃ মহসিন আলী সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, সমির উদ্দিন মণ্ডল হত্যার ঘটনায় জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে চায় ঝিনাইদহ পুলিশ। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সোহানের বাবা মো. মহসিন আলী। এ সময় সোহানের মা পারভিন খাতুন ও ছোট দুই ভাই বোন উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে মহসিন আলী জানিয়েছিলেন, ১০ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে বিকাল ৫টার দিকে আমার বড় ছেলে কালীগঞ্জ নুর আলী কলেজের ছাত্র সোহান ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিলো। এ সময় নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চারজন লোক ইজিবাইকে করে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যায়। সে থেকে সোহান নিখোঁজ রয়েছে। এজন্য সোহানকে অপহরণ করে ঝিনাইদহ সহকারী পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। সবাই খুঁজতে থাকে সোহানকে। না, কোথাও পাওয়া যায় না তাকে। পুলিশ তার অপহরণের কথা অস্বীকার করে।

পুলিশ মামলা, জিডি কিছুই গ্রহণ করেনি। সংবাদ সম্মেলনের পর কিছু পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এরপর ফসল ক্ষেতে তার চোঁখ উপড়ানো লাশ পাওয়া যায়। সোহান ছেলেটার কতই বা বয়স হবে! বড় জোর ১৭? ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্র ছিলো সে। পুলিশ জিডি ও মামলা নেবে কিভাবে? তারাই যে সোহানকে তুলে নিয়ে গেছে!

জামায়াত নেতা ডাক্তার তারিক হাসানকে তুলে নেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। রাতের আধারে তাকে হত্যা করা হয়। তখন তার স্ত্রী ছিলেন সন্তান সম্ভবা। ডাক্তার তারিককে হত্যা করার ২৪ দিন পর তার স্ত্রী জন্ম দেন দুই যমজ কন্যা সন্তান। তাদের নাম তাবারাকা হাসান ও তাইয়ারা হাসান। এরা কান্না শেখার আগেই বাবাকে হারিয়েছেন। তারিক হাসানেরও কোনো অপরাধ ছিলো না। অপরাধ একটাই তিনি জামায়াত নেতা।

চট্টগ্রামের ঘটনা:
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম নগরের বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল নুরুল আলম নুরুকে। পরদিন ভোরে কর্ণফুলী নদীর তীরে নুরুর লাশের খোঁজ মেলে। নুরুল আলমের হাত ও পা নাইলনের দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিলো। ওড়না দিয়ে তার মুখ এবং শার্ট দিয়ে চোখ বাঁধা ছিলো। অনেকগুলো জখমের চিহ্ন ছিলো তার শরীরে। নুরুকে দুটি গুলি করা হয়েছিলো মাথায়। নুরু ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নুরুকে তুলে আনার ঘটনা অস্বীকার করেছিলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নুরুকে তুলে নিয়ে যাবার সময় তার স্ত্রী নিজ চোখে এসআই শেখ মোহাম্মদ জাবেদকে দেখেছিল। নুরুর কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধ ছিলো না। অপরাধ এটাই সে ছাত্রদলের নেতা ছিলো।

বগুড়ার একজন ছেলে। এ মুহুর্তে নাম মনে পড়ছে না। তাকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ তুলে নিয়ে যাবার কথা জানায় তার পিতা। থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনার কথা অস্বীকার করে। মাস দেড়েক পর সে ছেলের লাশ পাওয়া যায় কল্যাণপুর কথিত জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহতদের মধ্যে।
বিগত প্রায় দশ বছর যাবৎ শত শত মানুষকে বাড়ী, অফিস থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করার ঘটনাগুলোর মধ্যে কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম মাত্র।
টেকনাফের ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল হকের হত্যাকান্ডের ঘটনার পর দেখা যাচ্ছে অনেকেই অতি মানবিক হয়ে ওঠেছেন! খুব ভালো কথা। একরামুল হকের প্রকাশিত অডিও রেকর্ড শুনে অনেকেই নাকি ঘুমাতে পারছেন না! একরামুল হকের আগে এবং পরে যেসব নিরপরাধ মানুষ রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন-তখন কি তাদের ভালো ঘুম হয়েছিলো? তারা একরামের পরিবারের জন্য শোকে কাতর হয়ে ওঠেছেন!
দালাল মিডিয়াগুলো একরামের হত্যাকান্ডের বিষয়ে খুবই সোচ্চার হয়ে ওঠেছে। একরামুল হক হত্যাকান্ডের ঘটনায় আমিও শোকাহত, ব্যথিত। কারণ আমি একজন মানব সন্তান। আমার ভেতরে সবসময় মনূষ্যত্ব কাজ করে। বিনা অপরাধে একজন মানুষকে হত্যা করা হলে সে কোন দলের সে বিবেচনা যারা করে তারা তো মানুষ নয়-জানোয়ার!!
কিন্তু একরামুল হকের আগে-পরে যেসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে তাদের ও তাদের পরিবারের ব্যাপারে কেমন ছিলেন আপনারা? আপনারা ছিলেন স্পষ্টই নিরব! আপনারা কিছুই বলেননি, কিছুই করেননি। চাটুকারী-তোষামোদী করে হালুয়া-রুটির ভাগ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। শোকে কাতর হওয়া দূরের কথা আপনাদের মধ্যে উল্লাস ভাব দেখা গেছে!
কারণ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা আপনাদের দৃষ্টিতে মানুষ নয়। তাদের রক্তের রঙ লাল নয়!
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য কয়টা গুলি লাগে? এ ব্যাপারে আমার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কারণ আমার চৌদ্দ পুরুষের কেউ মারামারী-গোলাগুলি এসবের মধ্যে ছিল না। তাই এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধা বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ভাই একজন মানুষকে মারার জন্য কয়টা গুলি লাগে। তিনি আমাকে জওয়াব দিলেন-ঠিক মতো একটা গুলি হিট করলেই যে কোনো মানুষ মুহূর্তেই মারা যাবে।
দেখুন দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কি নৃশংস কায়দায় মানুষ খুন করছে!! একজন মানুষকে হত্যা করার জন্য ১০ থেকে ৩০ টা গুলি করা হচ্ছে! আমরা কোন দেশে বাস করছি? এ গুলিগুলো কার টাকায় কেনা হয়? কোনো মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলার অধিকার রাষ্ট্র তথা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আদৌ আছে কিনা?
একদেশ দর্শী, পক্ষপাতদুষ্ট, একচোঁখা, ভুয়া মানবতাবাদী, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরা এসব প্রশ্ন কখনো করেছেন? না করেননি নি! আপনাদের বলছি, পোকায় খাওয়া, জীর্ণ-শির্ণ মানবতা দিয়ে দেশ ও মানুষের কোনো কল্যাণ বা উপকার অতীতেও হয়নি এখনো হবে না। আপনারা আফ্রিকা মহাদেশের জঙ্গলে গিয়ে মানবতার ফেরি করুন!!
লেখক: গল্পকার সাংবাদিক ও কলামিস্ট
নোট:
২০১৮ সালের ৩ জুন ফেসবুকে লেখা পোস্ট। তখন তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং পুলিশ-র্যাব তুলে নিয়ে যাবার ভয় ও আতঙ্কে অনেক বড় বড় লেখক-সাংবাদিকরা এ ধরণের লেখা লেখার সাহস পেতেন না। আমি লিখেছি। এর জন্য আমাকে যথেষ্ট মূল্য দিতে হয়েছে। হামলা-মামলা ও জেল-জুলুম সবকিছু সহ্য করতে হয়েছে। শুধু আমাকে জুলুম করলে মেনে নেয়া যেতো। আমার পরিবার, সন্তানদেরও জুলুম করা হয়েছে।
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized