সোমবার রাত ৮:২৯, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী ফাহমিদা প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি ফাহমিদা প্রজেক্ট: অব‌হে‌লিত নারী‌দের কর্মসংস্থানে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ

আত্মশু‌দ্ধির সফ‌রে: কসবা পা‌নিয়ারূপ (শেষ পর্ব)

৬২৬ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

রাত থে‌কে ভারী বর্ষণ হ‌চ্ছে। ফজ‌রের নামায প‌ড়ে হালকা বিশ্রাম নিলাম। বৃ‌ষ্টি তখনও পড়‌ছে। বৃ‌ষ্টির দিন মা‌নেই অলস সময় কাটা‌নো। ত‌বে জা‌কির ভাই আর আমা‌কে খুব কমই বাঁধাবিপ‌ত্তিগু‌লো আটকা‌তে পা‌রে। দুইজন নাস্তা শেষ করলাম। জা‌বেদ ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া শহ‌রে যা‌বেন। উনার নি‌জের প্র‌তিষ্ঠিত এক‌টি মাদরাসা র‌য়ে‌ছে। আজ‌কে তা উ‌নি নি‌জে উপ‌স্থিত থে‌কে ঈ‌দের ছু‌টি দি‌বেন। তাই উনার ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া যাত্রা। উ‌নি বৃ‌ষ্টির ম‌ধ্যেই বে‌রি‌য়ে পড়‌লেন। আমরা দুইজ‌নে ভাব‌ছিলাম, কী করা যায় আজ‌!

এ সফ‌রের আ‌গের পর্বটি পড়ুন

জা‌কির ভাই পা‌নিয়ারূপ এক‌টি মস‌জি‌দে যুবক বয়‌সে ইমাম‌তি কর‌তেন। পা‌নিয়ারূপ জা‌বেদ ভাই‌য়েরও গ্রা‌মের বা‌ড়ি। দুজ‌নে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ‌কে আমরা পা‌নিয়ারূপ যাব। প্রস্তুত হ‌য়ে চায়ে চুমুক দি‌য়ে পা‌নিয়ারূ‌পের উ‌দ্দে‌শ্যে যাত্রা করলাম। বৃ‌ষ্টি অবশ্য ততক্ষ‌ণে ক‌মে গি‌য়ে‌ছে। রাস্তায় আস্তে আস্তে হাঁট‌ছি গাড়র জন্য। কিন্তু গা‌ড়ি পাওয়া কী আর এত সহজ! যাই হোক অ‌নেকক্ষণ হাঁটার পর এক‌টি গা‌ড়ি পেলাম। গা‌ড়ি‌তে উ‌ঠে প্রথ‌মে বা‌য়েক যাই। তারপর সিএন‌জি‌তে উ‌ঠে পা‌নিয়ারূপ।

পা‌নিয়ারূপ সিএন‌জি স্টেশন থে‌কে হেঁ‌টে আমা‌দের গন্তব্যস্থ‌লে পৌঁছা‌তে হ‌বে। পা‌নিয়ারূপ বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হ‌কের গ্রা‌মের বা‌ড়ি। একটু হেঁ‌টে বাজর অ‌তিক্রম করার পর এক‌টি সুন্দর বা‌ড়ি দেখ‌তে পেলাম। বা‌ড়ি‌টি আ‌নিসুল হ‌কের। আ‌নিসুল হ‌কের পিতা ছি‌লেন সা‌বেক সংসদ সদস্য এড‌ভো‌কেট সিরাজুল হক। এ সুবা‌দে গ্রাম‌টি একটু গোছা‌নো ছিল। ত‌বে পু‌রো দে‌শের অন্যান্য গ্রামের মানু‌ষের চিন্তা ভাবনা থে‌কে ভিন্ন নয়। যাতায়াত কিংবা অবকাঠা‌মোগত উন্নয়নই প্রকৃত উন্নয়ন নয়। বস্তুগত উন্নয়ন বা‌হ্যিক যা এক‌টি দে‌শের প্রকৃত প‌রিচয় বহন ক‌রে না। মানু‌ষের মান‌সিক উন্নয়নই মূলত পৃ‌থিবী‌কে সুন্দর ও শা‌ন্তিপূর্ণ ক‌রে তুল‌তে পা‌রে। একটু হাঁটার পর আমরা আমা‌দের গন্তব্যস্থ‌লে পৌঁছায়। দুতলার উন্নয়‌নের কাজ চল‌ছে। মস‌জিদ‌টি সুন্দরই।

জা‌কির ভাই‌য়ের প‌রি‌চিত একজন হুজুর এ মস‌জি‌দ ও এ‌তে এক‌টি মাদরাসা প‌রিচালনা ক‌রেন। উনি অবশ্য সবার কা‌ছে শাওয়াল হুজুর না‌মে প‌রি‌চিত। বেশ উঁচু মা‌পের একজন চিন্তাশীল হুজুর। প্র‌া‌তিষ্ঠা‌নিক শিক্ষাগত যোগ্যতাও বেশ ভাল। তার সা‌থে র‌য়ে‌ছে সমৃদ্ধ পা‌রিবা‌রিক ব্যাকগ্রাউন্ড। জীব‌নে অ‌নেক‌কিছুই কর‌তে পার‌তেন। ত‌বে নি‌র্দিষ্ট এক‌টি চিন্তা‌কে কেন্দ্র ক‌রে গ্রা‌মেই থে‌কে গি‌য়ে‌ছেন। কাজ কর‌ছেন গ্রা‌মের মানু‌ষের ধর্মীয় ও মান‌সিক উন্নয়‌নের জন্য। তি‌নি মানু‌ষের উন্নয়‌নে নিয়‌মিত পারস্প‌রিক আ‌লোচনার ব্যবস্থা ক‌রেন। যেখা‌নে তি‌নি দর্শন, বিজ্ঞান, সমাজ, রাষ্ট্র প্রভৃ‌তি বিষ‌য়ে আ‌লোচনা ক‌রে থা‌কেন। বেশ ঠাণ্ডামেজা‌জের মানুষ। ধী‌রে সু‌স্থে বু‌ঝি‌য়ে শু‌নি‌য়ে কথা ব‌লেন হুজুর। যোহ‌রের নামায আদায় ক‌রে একসা‌থে ব‌সে অ‌নেকক্ষণ কথা বললাম আমরা চার-পাঁচ জন ‌মি‌লে। উনার ছে‌লে‌কে বাড়ি‌তে পাঠা‌লেন আমা‌দের দুপু‌রের খাবার আনার জন্য। উ‌নি খাবার ব্যাবস্থা ক‌রে গরু কিন‌তে যা‌বেন ব‌লে জা‌নি‌য়ে আমা‌দের কাছ থে‌কে বিদায় নি‌লেন।

দুপু‌রের খাবার শেষ ক‌রে চেয়া‌রে ব‌সে বিশ্রাম নি‌চ্ছিলাম। জা‌কির ভাই একটু পর বল‌লেন, `শরীফ ভাই, আমরা একটা কাজ কর‌তে পা‌রি।` আমি জান‌তে চাইলাম, কী ভাই?` উ‌নি প্রস্তাব কর‌লেন যে, `আমরা যে দেশ দর্শন টিম আ‌ছি, আমরা আমা‌দের অবসর সময়গু‌লো‌তে দুই তিন দি‌নের জন্য মস‌জি‌দে অবস্থান ক‌রতে পা‌রি। অর্থাৎ মস‌জিদ‌কে‌ন্দ্রিক আত্মশু‌দ্ধিমূলক একটা প্র‌জেক্ট প‌রিচালনা কর‌তে পা‌রি।` আ‌মিও আমার কিছু চিন্তা ভাবনা যোগ করলাম। আস‌লে এ‌দে‌শে প্রচুর মস‌জিদ র‌য়ে‌ছে। যেগু‌লো হ‌তে পা‌রে চিন্তা গ‌বেষণার এক‌টি বিরাট মাধ্যম। এমন‌কি মস‌জি‌দের প‌রি‌বেশগু‌লোও অত্যন্ত সু্ন্দর। যা আমা‌দের নি‌জের আ‌ত্মোন্নয়‌নেও বেশ বড় ভূ‌মিকা পালন কর‌তে পা‌রে। দুজ‌নে মি‌লে এক‌টি সুন্দর প‌রিকল্পনা দাঁড় করাই। আস‌লে স‌দিচ্ছা থাক‌লে কো‌নো না কো‌নো একটা ব্যবস্থা মি‌লে যায়। মস‌জিদকে‌ন্দ্রিক সময় কাটা‌তে দুইজন বের হ‌য়ে‌ছিলাম। কিন্তু একটু চিন্তা ভাবনার ছোঁয়া থাকায় মস‌জিদ‌কে কেন্দ্র ক‌রে সুন্দর এক‌টি উ‌দ্যোগ মিলে গি‌য়ে‌ছে। আস‌লে এবা‌রের সফ‌রের সব‌থে‌কে বড় পাওনা ছিল মস‌জিদকে‌ন্দ্রিক আত্মশু‌দ্ধির এ দলগত প্র‌চেষ্টার সন্ধান পাওয়া। এবার পা‌নিয়ারূপ থে‌কে আবার কাশীরামপুর যাবার পালা।

জা‌বেদ ভাইও ফো‌নে জানাল উ‌নি কাশীরামপুর আ‌ছে। কাশীরামপুর আসার প‌থেই আস‌রের ওয়াক্ত হয়। আস‌রের নামায আদায় শেষ ক‌রে হেঁ‌টে কাশীরামপুর পৌঁছায়। আস‌তে আস‌তে মাগ‌রি‌বের ওয়াক্ত হ‌য়ে যায়। মাগ‌রি‌বের নামায আদায় ক‌রে আ‌মি আর জাবেদ ভাই ফুচকা খে‌তে কুল্লাপাথর গেলাম। ফুচকা খে‌তে খে‌তে জা‌বেদ ভাই‌কে আমার জীব‌নের করুণ কা‌হিনী শুনালাম। এ‌দি‌কে এশা‌রের নামা‌যের ওয়াক্ত হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। কুল্লাপাথর থে‌কে ফি‌রে এ‌সে এশার নামায আদায় করলাম। এশা‌রের পর আমার শরীর খারাপ লাগ‌ছে। তাই রা‌তের খাবার অল্প খে‌য়ে শু‌তে গেলাম। এর ম‌ধ্যে মস‌জিদ‌ভি‌ত্তিক আত্মশু‌দ্ধির প্রজেক্ট নি‌য়ে জা‌কির ভাই‌য়ের সা‌থে অ‌নেক কথা হয়। কখন যেন ঘু‌মি‌য়ে পড়লাম। রা‌তে দুইটার দি‌কে মুয়া‌জ্জেম মস‌জি‌দে আ‌সে। উ‌নি তাহাজ্জুদ পড়‌তে থা‌কে।

রা‌তেই শরীর খারাপ লাগ‌ছিল। রাত তিনটা/সা‌ড়ে তিনটার দি‌কে কেমন জা‌নি ব‌মি বমি ভাব হ‌চ্ছিল আমার। আ‌মি উ‌ঠে মস‌জি‌দের দরজার কা‌ছেও যেতে পা‌রি‌নি ব‌মি ক‌রে ফেললাম। এরপর বা‌হি‌রে এ‌সে মুয়া‌জ্জেনকে বললাম জা‌কির ভাই‌কে ডাক দি‌তে। উ‌নি উ‌ঠে আমার অবস্থা খারাপ দে‌খে চিন্তায় প‌ড়ে গে‌লেন। এ‌দি‌কে ফজ‌রের ওয়াক্তও হ‌তে চ‌লে‌ছে। তাড়াতা‌ড়ি মস‌জিদ প‌রিষ্কার করা প্র‌য়োজন। উ‌নি নি‌জের হা‌তে পা‌নি আন‌লেন কাপড় আন‌লেন আর আ‌মিও কিছুটা সহ‌যো‌গিতা করলাম। দুইজ‌নে মস‌জিদ প‌রিষ্কার করার সময় ঝুম বৃ‌ষ্টি নামা শুরু করল। আ‌মি অবশ্য ব‌মির কার‌নে ফজ‌রের নামায পড়‌তে পা‌রি‌নি। ওজুখানায় ব‌সে ভাব‌ছিলাম। একজন আ‌রেকজ‌নের কতটুকু সহ‌যো‌গী হ‌লে বিনা স্বা‌র্থেও আ‌রেকজ‌নের বিপ‌দে মানুষ এ‌গি‌য়ে আস‌তে পা‌রে। আমার ব‌মি বন্ধ হ‌চ্ছিল না। জা‌কির ভাই‌ আর জা‌বেদ ভাই‌য়েরও ঘুম নষ্ট ক‌রে আমার পা‌শে ব‌সেছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় ডাক্তার বা ফা‌র্মেসী পাওয়া মুশ‌কিল। তবুও ভাগ্যক্র‌মে এক‌টি দোকা‌নে ব‌মির ওষুধ পাওয়া যায়। এছাড়া দুইজন মি‌লে ভালই সেবা ক‌রে‌ছেন। এ প‌রি‌স্থি‌তি‌তে পড়ায় জা‌কির বলল, কিছু প্র‌য়োজনীয় ওষুধও রাখ‌তে হ‌বে সা‌থে। একটু সুস্থ হ‌লাম।

এবার বা‌ড়ি ফেরার পালা। সকাল দশটা বা‌জে মোটামু‌টিভা‌বে ব‌মি বন্ধ। তাই জা‌কির ভাই আর আ‌মি প্রস্তুত নি‌য়ে বের হ‌য়ে পড়লাম। উ‌নি আর আ‌মি একসা‌থে কসবায় আ‌সি। কসবা থে‌কে দুইজ‌নকে দু‌’‌দি‌কে যে‌তে হ‌বে। কসকায় এ‌সে ফা‌র্মেসী থে‌কে ওষুধ নি‌য়ে ওষুধ খেলাম। এরপর আমরা পরস্পর ভিন্ন ভিন্ন সিএন‌জি‌তে উ‌ঠি। উ‌নি যা‌বে ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া আর আ‌মি যাব নবীনগর বাঘাউড়ায় নানা বা‌ড়ি‌তে। ক‌বে আবার দুইজন একসা‌থে হ‌তে পারব জা‌নি না? ত‌বে আবার হয়‌তো নতুন কো‌নো অজানার সন্ধা‌নে নতুন কো‌নো জায়গায় দেখা হ‌বে ভাই আপনার সা‌থে। আমা‌দের চিন্তা ও জ্ঞা‌নের বন্ধনটা‌ অটুট রাখুক।

শরীফ উদ্দীন রনি

সাংবাদিক, কলামিস্ট

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

হিজবুল্লাহকে ইসরাইলের কঠিন হুশিয়ারি

‌ফি‌লি‌স্তি‌নের রক্তঝরা ইতিহাস

বিপদে ভেঙ্গে পড়া নয়, কৃতজ্ঞতাবোধ…

মান‌সিক অস্থিরতা দূর করতে কোন…

প‌রিবার ও সম্প্রী‌তির বন্ধন

অর্থই কি সব সু‌খের মূল?