বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭:৪১, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ. ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী ফাহমিদা প্রজেক্ট আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মোকতাদির চৌধুরী এমপি ফাহমিদা প্রজেক্ট: অব‌হে‌লিত নারী‌দের কর্মসংস্থানে বিনামূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ

দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকা দুই নেত্রীর দায়িত্ব

সাক্ষাৎকার: আবুল কাসেম ফজলুল হক

আমার লেখাতে আমি প্রায়ই বলি, আমার চিন্তাগত কোনো ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন। সংশোধন করব। আপনারাও নতুন চিন্তা ও প্রস্তাবনা পেশ করুন। সব চিন্তার পর্যালোচনা ও সমন্বয়ে অবশ্যই ভালো চিন্তার বিকাশ ঘটবে।

বিশিষ্ট লেখক, কলামিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান আবুল কাসেম ফজলুল হক সম্পর্কে পাঠককে নতুন করে পরিচিত করে দেয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। তিনি শিক্ষিত সমাজে একজন সজ্জন ও চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। ২০১৫ সালে তার একমাত্র ছেলে ‘জাগৃতি প্রকাশনী’র স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত হামলায় নিহত হন। এ নিয়েও তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। সম্ভবত এর বছরদুয়েক পরই অর্থাৎ ২০১৭-১৮ ‘র দিকে তার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একান্তে কথা বলেন দেশ দর্শন সম্পাদক জাকির মাহদিন। তার সে সাক্ষাৎকারটি এখনো প্রাসঙ্গিক হওয়ায় এবং বিভিন্ন দিক থেকে এর যথেষ্ট গুরুত্ব থাকায়, সর্বোপরি এতে কালোত্তীর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর থাকায় দেশ দর্শনের পাঠকদের জন্য তা প্রকাশিত হল।

জাকির মাহদিন: দীর্ঘ জীবন সরকারি চাকরি করতে গিয়ে এমন কখনো মনে হয়েছে যে দেশ জাতির স্বার্থে চিন্তা ও কাজ করতে আরো বেশি সময় দেয়া এবং সরকার ও রাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্য ‘চাকরি’ নামক কর্মটি ছেড়ে দেয়া উচিত?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: না, কারণ ‘চাকরি-জগতে’ একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণেরই- বিশেষ করে দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সর্বাধিক স্বাধীনতা, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা এবং সরকার ও রাষ্ট্রকে শোধরানো তথা দিকনির্দেশনা দেয়ার সরাসরি অধিকার রয়েছে। যদিও আমাদের ব্যক্তিগত লোভ-লালসা ও দলীয় লেজুড়বৃত্তির কারণে আমরা তা পারিনি। অবশ্য যখন বাকশাল হয়েছিল, তখন আমি ছাড়া বাকি প্রায় ছয়শ’ শিক্ষকই এর সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়েছিলেন।

জাকির মাহদিন: আমাদের মনে হয় আপনি আমাদের দেশের বাছাইকৃত দশ বা বিশজন চিন্তাশীল ব্যক্তি ও লেখকদের অন্যতম। আপনার লেখা ব্যাপকভাবে প্রচার পেয়েছে, পাঠকমহল গ্রহণ করেছে, মিডিয়াও যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়েছে। আপনার আহ্বান বলতে গেলে প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের নিকট পৌঁছেছে। এরপরও সমাজ শোধরালো না, রাষ্ট্র পরিবর্তিত হলো না- এটা কি আপনার ব্যর্থতা এবং আপনার লেখা ও দর্শনের অযথার্থতা প্রমাণ করে না?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: না। কারণ যুগে যুগে এমন বহু মনীষী এবং নবী-রাসুল এসেছেন যারা নিজেরা সঠিক ছিলেন কিন্তু তবুও সমাজ শোধরায়নি, মানুষ সৎ হয়নি, তাদের গ্রহণ করেনি অথবা তাদের নীতি-আদর্শ গ্রহণ করেনি। যেমন মহাত্মা গান্ধী, বুদ্ধ, সক্রেটিস, আরো অনেকে। তবে হযরত মুহাম্মদ সা. এক্ষেত্রে সর্বাধিক সফল ছিলেন।

জাকির মাহদিন: আপনি তো বলেন ভালো-মন্দ মিলিয়েই মানুষ। তো আপনি কি আপনার মন্দগুলো চিহ্নিত ও দূর করার পেছনে খুব একটা সময় বা গুরুত্ব দেন? কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আছে?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আসলে এমনটা করলে আমাদের কথিত চিন্তাশীল ও বুদ্ধিজীবীগণ এটাকে লেজে-গোবরে করে ফেলবেন। কারণ গঠনমূলক সমালোচনাকে এগিয়ে নেয়ার মতো যথেষ্ট দক্ষ তারা নন।

জাকির মাহদিন: তবুও কি আপনি আপনার দায়িতটুকু পালন করতে পারেন না আপনার সমালোচনা ও ভুল-ভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দেবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে। যাতে তরুণরা এক্ষেত্রে অন্তত একজনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পায়?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: সীমিত পরিসরে তা আমি সবসময়ই করি। আমার লেখাতে আমি প্রায়ই বলি, আমার চিন্তাগত কোনো ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন। সংশোধন করব। আপনারাও নতুন চিন্তা ও প্রস্তাবনা পেশ করুন। সব চিন্তার পর্যালোচনা ও সমন্বয়ে অবশ্যই ভালো চিন্তার বিকাশ ঘটবে। এখন আমার বয়স হয়েছে। শরীর আগের মতো নেই। কাজও খুব বেশি করতে পারি না।

জাকির মাহদিন: আপনি যে বিশ্ব-সরকারের কথা বলেন, সেটা যে চরম কর্তৃত্ববাদী, নিপীড়ক ও শোষক হয়ে উঠবে না তার নিশ্চয়তা কী? তখন তো সে সরকারকে প্রতিহত করারও দ্বিতীয় কোনো পথ থাকবে না।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আসলে এটা শুধু আমার একটা প্রস্তাব। এর সমস্যা নিয়ে ভাবিনি, তবে ভাবতে হবে। যদি দেখা যায় এটা সমস্যাপূর্ণ, তাহলে বাতিলযোগ্য। বিকল্প পথ-পদ্ধতি খোঁজা কর্তব্য। আসুন আমরা সবাই মিলে খোঁজাখুঁজির এ কর্তব্যটা পালন করি।

জাকির মাহদিন: বঙ্গবন্ধুর আমলে জাসদ ও গণবাহিনীর হত্যা-লুটতরাজে আপনার ভূমিকা কী ছিল?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: তখন একদিকে রক্ষীবাহিনী অন্যদিকে কথিত ‘শ্রেণিশত্রু খতম’ করার নামে সিরাজ শিকদার এবং পরে জাসদের গণবাহিনী- এরা উভয়েই খুনোখুনিতে মেতে উঠেছিল যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এরা এতটাই হিংস্র হয়ে উঠেছিল যে, এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলারও অবকাশ ছিল না।

জাকির মাহদিন: জাতির প্রতি এ মুহূর্তে আপনার বক্তব্য কী?

আবুল কাসেম ফজলুল হক: ‘আটাশ দফা’, আমার লিখিত ‘আটাশ দফা’ বইটিই জাতির প্রতি এ মুহূর্তে আমার বক্তব্য। এটি এখন আরো সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

জাকির মাহদিন: দুই নেত্রীর একত্রে বসা ও আলাপ-আলোচনা আজকের বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের একান্ত চাওয়া; এতে সমস্যার ন্যূনতম সমাধান হোক বা না হোক সেটা পরের কথা। আপনি চাইলে দুই নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে অন্তত জনগণের অনুরোধটুকু পৌঁছে দিতে পারেন। সে সক্ষমতা আপনার আছে বলে আমাদের বিশ্বাস। খালেদা জিয়া আপনার প্রতি ভালো ধারণা রাখেন। শেখ হাসিনাও আপনার প্রতি সহমর্মী তথা শ্রদ্ধাশীল। তার দলের অনেকে আপনার সম্পর্কে যাই বলুক, তিনি নিজে এসবে কান দেন না।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: অতীতে অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব এ উদ্যোগ নিয়ে সফল হননি। তাছাড়া এতে কোনোই লাভ নেই, যদি না তারা স্বেচ্ছায় বসেন। প্রথমত শেখ হাসিনার সাংবিধানিক দায়িত্ব, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে বিরোধী দলের(?) প্রধানকে দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকা। এতে সে ব্যক্তি নিজে উপস্থিত না হলেও ফিরতি চিঠি দিয়ে উপযুক্ত কারণ দর্শানো এবং ঊর্ধ্বতন কাউকে পাঠানো একান্ত দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে বিরোধী দলের(?) প্রধানও একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে বাধ্য। অতীতের সরকারগুলো এমনটাই করেছেন।

জাকির মাহদিন: ঠিক এই কথাগুলোই তো আপনি নিজে উপস্থিত হয়ে সরাসরি দুই নেত্রীকে বলতে পারেন। এতে লাভ হোক বা না হোক, অন্তত জনগণের একটা চাওয়া তো পূরণ হচ্ছে। আপনি শেষ বয়সে যদি এ উদ্যোগটা নেন, জাতি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকবে। তাছাড়া আপনি জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতি ঋণী। দীর্ঘ জীবন সরকারী চাকরি ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন।

আবুল কাসেম ফজলুল হক: আরো অনেকেই আমাকে অনুরোধ করছে এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিতে। আপনাদের কথা আমি বিবেচনা করব। দেখি কি করা যায়। কতটুকু করা যায়।

জাকির মাহদিন: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আবুল কাসেম ফজলুল হক: আপনাকেও।

উল্লেখ্য, এ সাক্ষাৎকার যখন নেয়া হয়েছিল, তখন খালেদা জিয়া সাংবিধানিকভাবে বিরোধীদলীয় নেত্রী না হলেও সংসদের বাইরে অনেকটা কার্যত বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন এবং সুস্থ-সামর্থ্যবান ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে তখনো তিনি বাংলাদেশের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী ছিলেন, যা এখন না-ও থাকতে পারেন।  তাই সাক্ষাৎকারটি পড়ার সময় পাঠককে চার-ছয় বছর আগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা কাম্য। 

ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান,  প্রধান কলাম,  সাক্ষাৎকার

ট্যাগ: জাকির মাহদিন

Leave a Reply