সোমবার দুপুর ১২:৪৭, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

বিজ্ঞান গবেষণায় বস্তু ও শক্তির সমন্বয় অপ‌রিহার্য

শরীফ উদ্দীন রনি

বস্তু ছাড়া যেমন বি‌শ্বের কল্পনা করা ক‌ঠিন, তেম‌নি শ‌ক্তি বা বিশেষ শক্তি ছাড়া সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই অচল। বস্তু তার অ‌স্তিত্ব টি‌কে‌য়ে রাখ‌তে ব্যর্থ হয়, যখন এর শ‌ক্তি‌কে ভে‌ঙ্গে একে নিঃ‌শেষ ক‌রে ফেলা হয়।

বিজ্ঞা‌নের গবেষণার মূল ভি‌ত্তি ‘বস্তু’। আধুনিক বি‌শ্ব বস্তুগত উন্ন‌য়নে শতভাগ স‌চেষ্ট। ‘বস্তুর’ স্বরূপ, বৈ‌শিষ্ট্য ও শক্তি আ‌বিষ্কারই এর মূখ্য উ‌দ্দেশ্য। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়- বিশ্ব কি শুধু বস্তু দ্বারাই নি‌র্মিত? শুধু বস্তু দ্বারা নি‌র্মিত হ‌লে বস্তুবিষয়ক চিন্তা ও গ‌বেষণার দ্বারা পৃথিবীকে ক্রমাগত সমস্যামুক্ত করা সম্ভব হ‌তো। অথচ বিশ্ব বা পৃথিবী আজ কতটুকু সমস্যামুক্ত? এর উত্তর স্বয়ং বর্তমান বিশ্বপ‌রি‌স্থি‌তিই দিচ্ছে। ‘বস্তুবাদ’ দিনে দিনে মানবসভ্যতা‌কে ধ্বং‌সের দি‌কে নি‌য়ে যা‌চ্ছে। চার‌দি‌কে আজ যে হা‌রে ক্রমাগত বস্তুগত উন্নয়ন হ‌চ্ছে, তা সংশয়-সংঘা‌তের প‌রিমাণ বাড়িয়েই চ‌লে‌ছে। আজও ‘তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞান’ এ প্র‌শ্নের চূড়ান্ত সমাধা‌নে আস‌তে পা‌রেনি।

‌বিশ্বসৃ‌ষ্টির মূল রহ‌স্যের অন্যতম বিষয় হ‌লো, বস্তু ও শ‌ক্তির সমন্বয়। আধু‌নিককা‌লের তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞা‌নীগণ ‘বস্তু’ ও ‘শক্তির’ বিষয়টি সুস্পষ্ট কর‌তে ব্যর্থ। তারা এর সমাধান দি‌তে পা‌রলে হয়‌তো তা‌দেরকে দি‌য়ে বিশ্বব্যবস্থার সুস্থিশীলতা আশা করা যেত। ত‌বে তারা ক‌স্মিনকা‌লেও এর সমাধান কর‌তে পার‌বে না। কারণ বিজ্ঞান শুধু ‘অনুমান’ আর ‘ধারণার’ উপর নির্ভর ক‌রে কিছু পর্য‌বেক্ষণ এবং বস্তুগত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রাপ্ত প্রমাণ‌কে স্বীকৃ‌তি দেয়। এর স্থ‌লে শ‌ক্তিশালী অন্য‌কো‌নো ধারণা পে‌লে তার দি‌কে ধা‌বিত হ‌তে হয়। তখনই দীর্ঘদি‌নের গ‌ড়ে উঠা নিয়‌মের মা‌ঝে নি‌য়ে আস‌তে হয় প‌রিবর্তন। সকল প‌রিবর্তনই বেদনাদায়ক। তাই পৃ‌থিবী‌তে স্থিতিশীলতা বিরাজ করা‌নো সম্ভব নয়। পৃ‌থিবী‌তে স্থিতিশীলতা আনার প্রধান মাধ্যম হল ধ্রুব সত্য, যা অপ‌রিবর্তনীয়। যেখা‌নে বিজ্ঞা‌নের সংজ্ঞাই প‌রিবর্তনশীল, সেখা‌নে বিজ্ঞা‌নের মা‌ঝে বিশ্বব্যবস্থার স্থি‌তিশীলতা চাওয়াটা কি অমাবস্যার রা‌তে চাঁ‌দের আ‌লো খোঁজার ম‌তো অলীক বিষয় নয়!

বিজ্ঞান কি আং‌শিক, না পূর্ণ এক ব্যবস্থা? য‌দি পূর্ণ হ‌য়ে থা‌কে তা‌তে কো‌নো কিছুর চূড়ান্ত মীমাংসা নেই কেন? আং‌শিক যে‌ কো‌নো কিছুই মীমাং‌সিত হ‌বে না। বাস্তব বিজ্ঞান সাধনার সময়কাল ধ‌রে হিসাব শুরু কর‌লে আমরা দেখব, তার শুরুটা ছিল আং‌শি‌কের উপর। এখনো তা আং‌শি‌কের উপরই দাঁ‌ড়ি‌য়ে আ‌ছে। যার ঘূর্ণন ও আবর্তন থে‌কে নি‌জে‌কে মুক্ত কর‌তে পার‌ছে না বিজ্ঞান। যতক্ষণ বিজ্ঞান তার এ অবস্থা থে‌কে নি‌জে‌কে মুক্ত কর‌তে পার‌বে না, ততক্ষণ তার কা‌ছে প‌ড়ে থাক‌লে কো‌নো সমাধা‌নেই আস‌া যাবে না। বরং দিন কি দিন এর গুরুত্ব বৃ‌দ্ধির দ্বারা মানুষের ধ্বং‌সের মাত্রাই বাড়‌তে থাক‌বে।

পূর্ণতা আর অপূর্ণতার প্রশ্ন কেন আসলো? প্রশ্নটা এ কার‌ণে জ‌ড়িত- বিগব্যাঙ্ক থেকে বিশ্ব তৈরির শুরু ব‌লে ধ‌রে নি‌চ্ছেন তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞা‌নীরা। এক‌টি পূর্ণ বিন্দুর মতই কল্পনা কর‌া হচ্ছে সমগ্র সৃ‌ষ্টি‌কে। ত‌বে তা বি‌স্ফোর‌ণের পর বি‌ভিন্ন অং‌শে বিভক্ত হ‌য়ে‌ছে। অর্থাৎ স্থি‌তিশীল অবস্থা থে‌কে অ‌স্থি‌তিশীল হ‌য়ে‌ছে। তাহ‌লে এখন প্রশ্ন, আং‌শিক অবস্থা‌য় কো‌নো কিছু স্থিতিশীল থা‌কে কি না? য‌দি না থা‌কে ত‌বে তা‌কে অবশ্যই স্থি‌তিশীলতার দি‌কে ফেরত আস‌তে হ‌লে পূর্ণ হ‌তে হ‌বে। এখন বিজ্ঞা‌নেরই ভে‌বে দেখা উ‌চিত, বর্তমান এই অ‌স্থি‌তিশীল বিজ্ঞান‌কে স্থিতিশীল কর‌তে হ‌লে কী করা প্র‌য়োজন?

“‌বিশ্বসৃ‌ষ্টির মূল রহ‌স্যের অন্যতম বিষয় হ‌লো, বস্তু ও শ‌ক্তির সমন্বয়। আধু‌নিককা‌লের তা‌ত্ত্বিক বিজ্ঞা‌নীগণ ‘বস্তু’ ও ‘শক্তির’ বিষয়টি সুস্পষ্ট কর‌তে ব্যর্থ। তারা এর সমাধান দি‌তে পা‌রলে হয়‌তো তা‌দেরকে দি‌য়ে বিশ্ব ব্যবস্থার সুস্থিশীলতা আশা করা যেত। ত‌বে তারা ক‌স্মিনকা‌লেও এর সমাধান কর‌তে পার‌বে না। কারণ বিজ্ঞান শুধু ‘অনুমান’ আর ‘ধারণার’ উপর নির্ভর ক‌রে কিছু পর্য‌বেক্ষণ এবং বস্তুগত পরীক্ষা নিরীক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রাপ্ত প্রমাণ‌কে স্বীকৃ‌তি দেয়।”

বিজ্ঞান কি বস্তুর ‘বস্তুত্ব-রহস্য’ উদঘাট‌নের জন্য, না সমগ্র বিশ্বব্যবস্থার জন্য? য‌দি শুধু বস্তুত্ব-রহস্য উদঘাট‌নের জন্য হ‌য়ে থা‌কে, ত‌বে তার সমগ্র বি‌শ্বব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই। অন্যদি‌কে বিশ্বব্যবস্থা নি‌য়ে কথা বল‌লে এর পক্ষে বস্তুর রহস্য নি‌য়ে কথা বলার অন্তরায় হ‌য়ে দাঁড়া‌য়। এখা‌নে মূল ব্যাপারটা হ‌লো, বিজ্ঞা‌নের এ দু‌য়ের মা‌ঝে একটা সমন্বয় সাধন কর‌তে হ‌বে। তা না হ‌লে তা‌কে আজীবন একটা উভয় সংক‌ট ও চরম সাংঘর্ষিক অবস্থার মধ্যে কাটাতে হবে। যা আবার এর সত্যতা প্রমা‌ণের অন্তরায় হি‌সে‌বেও কাজ কর‌বে।

বিজ্ঞা‌নের বহু শাখা র‌য়ে‌ছে। ভিন্ন ভিন্ন শাখা ভিন্ন ভিন্ন কাজ ক‌রে থা‌কে। এর এ‌কেকটা শাখা এ‌কেক বিষয়‌কে প্রাধান্য দি‌য়ে থা‌কে। তা‌তেও দেখা যায়, বস্তুবাদ‌কে প্রাধান্য দি‌য়ে সবকিছু প্রমাণ কর‌তে চাওয়ার প্রবণতা। অথচ বস্তুর বৈ‌শিষ্ট্য নি‌রেট বা স্থিতিশীল বৈ‌শিষ্ট্য নয়। এর চে‌য়ে আ‌রো ব্যতিক্রম এবং স্থিতিশীল বৈ‌শি‌ষ্টের অ‌ধিকারী স্বয়ং মানুষ। একটা হাত দি‌য়ে কি পূর্ণ মানুষটার কল্পনা করা যায়? না পূর্ণ মানুষটার কল্পনা কর‌তে হ‌লে তার সমগ্র দেহটা‌ কল্পনা কর‌তে হয়? অং‌শে বিভক্ত হ‌য়েও তা‌কে পূর্ণতার দি‌কে ধা‌বিত হ‌তে হয়। ত‌বেই প্রকৃত মানুষটা‌কে পাওয়া যায়। বস্তুর ক্ষেত্রে এ কথাও প্র‌যোজ্য, হাই‌ড্রো‌জে‌নের ই‌লেক্ট্র‌নের কথা বললে স্বয়ং‌ক্রিয়ভা‌বে তার প্রোটন আর নিউট্র‌নের কথা চ‌লে আ‌সে। সুতরাং বিজ্ঞা‌নের অপার সম্ভাবনার দ্বার খু‌লে দেওয়ার জন্য বস্তুর এবং শ‌ক্তির সমন্বয় অপরিহার্য।

বিজ্ঞা‌নের তত্ত্বগু‌লো কি শুধু ‘বস্তুর’ গভী‌রে পৌঁছার জন্য? আধু‌নিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী‌দের কা‌ছে এটাই হয়‌তো সত্য। য‌দি তাই সত্য হয়, ত‌বে কেন মানুষ মানবীয় চা‌হিদা পূর‌ণের জন্য জীব‌নের পা‌নে ছু‌টে চ‌লে? মোটকথা, বিজ্ঞান মানুষকে বস্তু বানা‌তে চাই‌লেও জীবন তা‌কে বস্তু সাজ‌তে বা হ‌তে দেয় না। তাই প্র‌তি‌নিয়ত বস্তুর পেছ‌নে ছুট‌তে গি‌য়েও তা‌কে তার মানবীয় চা‌হিদার পেছ‌নে ছুট‌তে হয়। তাই কোনো মানুষেরই এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই, বিজ্ঞান শুধু বস্তুর গভী‌রে পৌঁ‌ছে সমস্যার সমাধান ক‌রে ফে‌ল‌বে। ম‌নো‌বিজ্ঞান বিজ্ঞা‌নের শাখা হ‌লেও এর পেছ‌নে লু‌কি‌য়ে আ‌ছে বস্তুবাদ। বস্তুবা‌দের তথাকথিত ‘তা‌ত্ত্বিকতা’ দি‌য়েই এর মাপ‌জোখ সম্পন্ন করা হ‌চ্ছে। তাই ম‌নো‌বিজ্ঞানও বস্তুবা‌দের বা‌ইরে যেতে পারেনি। ম‌নো‌বিজ্ঞান বিজ্ঞা‌নের সবচেয়ে জ‌টিল ও ব্যতিক্রমী শাখা। তা‌কে এভা‌বে শৃঙ্খ‌লিত করাটা কল্যাণকর নয়।

এমন আ‌রো হাজারো প্রশ্ন রয়েছে বিজ্ঞান নি‌য়ে। প্রশ্ন সারা জীবনই করা যা‌বে, কিন্তু শেষ হ‌বে না। বিজ্ঞা‌নের অগ্রগ‌তি মানুষ‌কে আরো ক‌য়েক হাজার বছর এ‌গি‌য়ে নি‌য়ে যা‌বে, যদি বিজ্ঞানীগণ একই স‌ঙ্গে বস্তু‌বিজ্ঞা‌ন আর শ‌ক্তির সমন্বয় সাধন কর‌তে পা‌রেন। বস্তু ছাড়া যেমন বি‌শ্বের কল্পনা করা ক‌ঠিন, তেম‌নি শ‌ক্তি বা বিশেষ শক্তি ছাড়া সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই অচল। বস্তু তার অ‌স্তিত্ব টি‌কে‌য়ে রাখ‌তে ব্যর্থ হয়, যখন এর শ‌ক্তি‌কে ভে‌ঙ্গে একে নিঃ‌শেষ ক‌রে ফেলা হয়। বস্তুর পূর্ণ অ‌স্তিত্ব টি‌কে আ‌ছে শ‌ক্তি‌কে ভর ক‌রেই। সুতরাং সেই ‘শক্তি’ কী? জীবন কী? ‘মন’ কী। এসব নিয়েও আজ সমানতালে ভাবতে হবে।

শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, কলামিস্ট

sharifuddin420953@gmail.com

ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান,  প্রধান কলাম,  সম্পাদকীয়

ট্যাগ:

Leave a Reply